ভিডিও মার্কেটিং অনলাইনে আয়ের জন্য একটি অত্যন্ত সম্ভবনাময় খাত। আমাদের দেশে এখন খুব একটা বেশি না হলেও বহির্বিশ্বের এর চাহিদা বা জনপ্রিয়তা অনেক বেশি, আর দিন দিন তা বেড়েই চলছে। ২০১৬ সাল নাগাদ কনট্যান্ট মার্কেটিং কে পেছনে ফেলে ভিডিও মার্কেটিং এগিয়ে যাবে বলে অভিজ্ঞজনদের ধারণা।
ইউটিউব পার্টনারশিপ মানে ইউটিউব পরিবারের সদস্য হওয়া। পার্টনার হওয়ার জন্য প্রতিদিন হাজার হাজার আবেদন আসতে থাকে তাদের কাছে। যদিও আবেদন জন্য সুনির্দিষ্ট কোন নীতিমালা নেই তার পরও কিছু কিছু দিক বিবেচনা করে এ আবেদন গ্রহন করা হয়। যেমন,
ভিডিও মার্কেটিং করে কিভাবে ইউটিউবের মাধ্যমে ঘরে বসে আয় করা যায়, এ নিয়ে আমার একটি আর্টিকেল পূর্বে প্রকাশিত হয় যাতে শুধু মাত্র ধারণা দেবার চেষ্টা করেছি বিষয়টি সম্পর্কে। লেখাটি প্রকাশিত হওয়ার পর অনেকেই ভিডিও মার্কেটিং সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চেয়েছেন।আমার লিখাটি আপনাদের মনে আগ্রহ সৃষ্টি করতে পেরেছে জেনে আমি আনন্দিত এবং কৃতজ্ঞ তাদের কাছে যারা গঠনমূলক সমালোচনা করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার পথকে তরান্বিত করেছেন।
ভিডিও মার্কেটিং এর জন্য প্রথমেই প্রয়োজন ভিডিওটি সবার কাছে পৌঁছে দেওয়া। আর এর জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত এবং সহজ মাধ্যম হচ্ছে ইউটিউব কারন এটিই এখন সবচেয়ে বড় ও জনপ্রিয় ভিডিও শেয়ারের সাইট। এই ইউটিউবকে কাজে লাগিয়ে আমাদের নিজস্ব তৈরী ভিডিওর মাধ্যমে অনলাইন থেকে কিভাবে আয় করা যায় তা নিয়ে ২ পর্বে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
কিভাবে আয় করা যায়?
আমি যদি মনে করি অনলাইনে মেশিন আমাকে টাকা বানিয়ে দিবে,তবে সেটি হবে আমার খুব ভুল ধারণা। একটা কথা মনে রাখতেই হবে যে,সাফল্য রাতারাতি আসেনা। সদিচ্ছা, সঠিক পরিকল্পনা, পরিশ্রম আর অধ্যবসায় সফলতার মুখ দেখায়। এটি সত্য যে প্রথম দিকে অনলাইনে আয় করাটা কিছুটা কঠিন, কিন্তু এই চারটি গুনের সমন্বয় যদি আপনার মধ্যে থাকে, সফলতা আপনাকে এড়িয়ে যেতে পারবেনা কখনই। তখন কাজ কে আপনি খুজতে হবে না, বরং কাজই আপনাকে খুজে নিবে।
ইউটিউব ব্যবহার করে ভিডিওর মাধ্যমে আয় করতে পারি অনেক ভাবেই,কিন্তু যেগুলো বেশী কার্যকর সেগুলো হল,
ইউটিউব পার্টনার হয়ে:
ইউটিউব পার্টনারশিপ মানে ইউটিউব পরিবারের সদস্য হওয়া। পার্টনার হওয়ার জন্য প্রতিদিন হাজার হাজার আবেদন আসতে থাকে তাদের কাছে। যদিও আবেদন জন্য সুনির্দিষ্ট কোন নীতিমালা নেই তার পরও কিছু কিছু দিক বিবেচনা করে এ আবেদন গ্রহন করা হয়। যেমন,
- ভিডিওটি সম্পূর্ণ, মানে ১০০% নিজের তৈরি হতে হবে। দেখতে, শুনতে, বা এর কনট্যাঁনট কোনকিছুই কপি করা যাবেনা অর্থাৎ গান, সুর, ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক, গ্রাফিক্স, ইমেজ কোন কিছুইনা। ইউনিক ভিডিও আপলোড করতে হবে।
- একটি ভিডিও আপলোড করে বসে থাকলে চলবেনা,নিয়মিত আপলোড করতে হবে।অনেক বেশী দর্শক থাকতে হবে। যদি কারো ভিডিও বাণিজ্যিক ভাবে সফল হয়, অনেক জনপ্রিয়তা থাকে সেক্ষেত্রে ইউটিউব নিজেই আমন্ত্রন করে তাদের পার্টনার হওয়ার জন্য।
- গুগল অ্যাডসেন্স এ অ্যাকাউন্ট থাকলে, পার্টনারশিপ পাওয়ার ক্ষেত্রে তা অনেক বড় ভুমিকা পালন করে।
পার্টনার হলে কি সুবিধা ?
ইউটিউব পার্টনার হয়ে যদি আমার ভিডিওটি প্রচার করি তাহলে বাড়তি কিছু সুবিধা পেতে পারি যা বেশি আয়ের জন্য সাহায্য করবে। যেমন,
- কোন ভিডিওটি কপি হওয়ার কোন ভয় থাকেনা কারন ভিডিওটির আলাদা আইডি থাকে এবং তা ট্র্যাক করা হয়।
- কনট্যাঁনট লেংথ বা সাইজ লিমিট করে দেয়া হয়না ভিডিও আপলোড এর ক্ষেত্রে।
- পার্টনার হলে সরাসরি ভিডিওটি ভাড়া দেওয়া যায়। এক্ষেত্রে ক্লায়েন্টকে প্রথমে পেমেন্ট করতে তারপর ভিডিওটি চালাতে পারে।
- পার্টনার হওয়ার সব থেকে বড় সুবিধা হল ভিডিওটি ইউটিউব চ্যানেল থেকে প্রমট করা হয়। এতেকরে ক্লায়েন্ট কে অনেক ভাল মানের ভিডিও উপহার দেওয়া যায়।
যেভাবে পার্টনারশিপ কনফার্মেশন বোঝা যাবে,
- প্রথমে ইউটিউব এ সাইন ইন করতে হবে।
- অ্যাকাউনট সেটিং এ গিয়ে ইমেইল সিলেকশন এ যেতে হবে
- ইউটিউব নিউ লেটার এ গিয়ে আপডেট (ইউটিউব ব্রডকাস্ট) এ ক্লিক করতে হবে।
- তারপর সেভ করতে হবে।
গুগল এডসেন্স এর মাধ্যমে :
গুগল এডসেন্স হল গুগল দ্বারা বিজ্ঞাপন প্রদানের ব্যবস্থা। এ প্রোগ্রামটি ওয়েবসাইট পাবলিশারদের জন্য তৈরি হয়েছে যাতে তারা তাদের ওয়েবসাইট বা ভিডিওর মাধ্যমে কোন বিজ্ঞাপন প্রচার করতে পারে এবং আয় করতে পারে। যেমন আমি যদি আমার ওয়েবসাইট বা ভিডিওতে আডসেন্সের মাধ্যমে বিজ্ঞাপন প্রচার করি আর এসব বিজ্ঞাপনে যদি ক্লায়েন্ট ক্লিক করে তাহলে পার ক্লিকের জন্য ওয়েব বা ভিডিওর মালিক টাকা পাবে গুগল থেকে। এসব বিজ্ঞাপন গুগল মেনেজ এবং কন্ট্রোল করে।
গুগল অ্যাডসেন্সে আবেদনের যোগ্যতাঃ
- যদি ভিডিওতে গুগল আডসেন্সের মাধ্যমে বিজ্ঞাপন প্রচার করতে চাই তাহলে প্রথমে গুগলএ অ্যাকাউন্ট করতে হবে। এ অ্যাকাউন্ট করতে কোন টাকা লাগে না,সম্পূর্ণ ফ্রী।
- অ্যাকাউন্ট করার পর আডসেন্সের জন্য আবেদন করতে হবে। এ আবেদনের জন্য ইউটিউব পার্টনার হতে হবে। ইউটিউব থেকে পার্টনারশিপের যে মেইলটি পাঠান হয়, আবেদন করার সময় সে লিঙ্কটা অ্যাড করে দিতে হয়। তাছাড়া এ আবেদন গ্রহণযোগ্য হবেন
- আবেদনের জন্য নিজস্ব ওয়েবসাইট থাকাটা ভাল,এতে সেই ওয়েব বা ভিডিওর প্রতি বিশ্বস্ততা বারে।তবে এর বিকল্প হিসেবে কাজ করে যদি ভাল মানের ভিডিও নিয়মিত প্রকাশিত হয় এবং অনেক বেশী অডিয়ান্স থাকে তাহলে।
- ইউটিউব অ্যাকাউন্ট লিঙ্ক দিয়ে আডসেন্স অ্যাকাউন্ট সাবমিট করা হয়।
ভিডিও তৈরির সময় একটা বিষয় খেয়াল রাখবো, ভিডিওতে প্রচারিত বিজ্ঞাপনে ক্লিক করলে যেন তা আলাদা উইন্ডো তে ওপেন হয়, তা না হলে সেটা ক্লায়েন্টের বিরক্তি ঘটায়।
আবেদন গ্রহনের ধাপ,
দুই ধাপে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে গুগল।
- যদি আমি আডসেন্সের জন্য আবেদন করি তাহলে প্রথমে গুগল আমার ইমেইল, ওয়েবসাইটের ঠিকানা, আবাসিক ঠিকানা সব থিক আছে কি না দেখবে।
- প্রথম ধাপ সম্পন্ন হলে গুগল আমাকে একটি কোড নাম্বার সহ ইমেইল পাঠাবে যাতে থাকবে আমি এখন বিজ্ঞাপন প্রচারের জন্য জজ্ঞ।র সেই কোড টি আমি আমার ভিডিও এর নিদিষ্ট স্থানে বসিয়ে দিলে গুগল থেকে অ্যাড পাওয়া যাবে।
যেভাবে বোঝা যাবে আবেদন গ্রহন হয়েছে কিনা,
- আডসেন্স অ্যাকাউন্ট এর হোম এ গিয়ে হোসট অ্যাকাউন্ট লেভেলএ গিয়ে তা দেখব।
- আডসেন্স অ্যাকাউন্ট এ যখন ৳১০০ এর বেশী হবে তখন গুগল তা পে করে।
অ্যাফিলিয়েট এর মাধ্যমেঃ
কোন কম্পানির পণ্য বা সেবা যদি আমার ভিডিও বা ওয়েব এর মাধ্যমে প্রমট করে তা অনলাইনে বিক্রির ব্যবস্থা করে দেই তাহলে তাহলে সেখান থেকে একটা পারসেনটেজ পাওয়া যায়, একেই বলে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং।
এই অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর মাধ্যমে প্রচুর টাকা আয় করা সম্ভব।
এর জন্য যা প্রয়োজন,
- প্রথমেই নিজের ব্রান্ডিং বাড়াতে হবে। অর্থাৎ ফেস ভেলু বাড়াতে হবে
- খুব ভালো কনটেন্ট এবং ভাল মানের ভিডিও হতে হবে,যাতে করে ভিজিটর আকৃষ্ট হয়।
- ভিডিও মার্কেটিং পোর্টফলিও থাকলে তা থেকে জানা যায় সব কিছু জানা যায়। এতে করে ক্লায়েন্টের সহজে সব বুঝতে পারে।
- ইউটিউব পার্টনার হওয়াটা ভাল কিন্তু অত্যাবশ্যকীয় নয়।
- একটি নিজস্ব ওয়েবসাইট রেফারেন্স এর মাধ্যমে ভিডিও তৈরী করলে তা ক্লায়েন্টের বিশ্বস্ততা অর্জনের জন্য অনেক বেশী সহায়ক।
- কিছু ওয়েব ২.০ (ফ্রী ওয়েবসাইট) থাকাটা ভাল এতে নিজের পরিচিতি বারে। অনলাইনে আয়ের জন্য প্রচুর দর্শক চ্যানেল অনেক জরুরী। আর এই চ্যানেল বাড়ানোর জন্য নিজের পরিচিতি অনেক বড় ভুমিকা পালন করে।
- আর্টিকেল সাবমিট সাইট এর সাথে ভাল যোগাযোগ থাকতে হবে। এর মাধ্যমে ভিজিটর বাড়ান যায়।ফেস ভেল্যু বাড়ানোর জন্য এটি সহায়তা করে।
উপরোক্ত বিষয়গুলোর সাথে ভিজিটর বা দর্শক জড়িত। যার ভিজিটর যত বেশী সে ততবেশি আয় করতে সক্ষম। মুলত দর্শক বা ভিজিটর কে মাথাই আমরা অনলাইনে কাজ করি। তাই আমার ভিডিওটি যদি দর্শকের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারে তবেই আমার সফলতা আর এর জন্য আমার ভিডিওর মান হতে হবে উৎকৃষ্ট।