কাক ফাঁটা রোদে ক্লান্ত হয়ে গলা শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা কিছু খাবারের জন্য হৃদয় ছটফট করে উঠে খুব। এদিকে স্বাস্থ্য নিয়ে আবার ভয়ও হয়, এই গরমে বাইরের কিছু খেয়ে রোগব্যাধি পেয়ে বসলে! কিংবা স্কুল থেকে ফিরলে আপনার ছোট্ট সোনামণি প্রায় আইসক্রিম খাওয়ার বায়না ধরে। রোজরোজ তো আর বাইরের আইসক্রিম খেতে দেয়া যায় না স্বাস্থ্যের কথা ভেবে। এতো দুশ্চিন্তা না করে ঘরেই বানিয়ে ফেলুন সহজ উপায়ে ঝামেলা ছাড়াই অল্প কিছু উপকরণ দিয়ে আইসক্রিম। থাকবে ঠিক স্বাস্থ্য, সাথে গরমের ক্লান্তিও জুড়োবে। তাছাড়া এই গরমে পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন ধরনের ফলমূল। বাড়িতেই এই গ্রীষ্মকালীন ফলমূল দিয়ে বানিয়ে নিতে পারেন মজাদার সব আইসক্রিম।
আমের আইসক্রিম
উপকরণঃ
১) ১ কাপ পরিমান একটি পাঁকা আমের ক্বাথ২) ১ কাপ টকদই
৩) ২০০ মিলি ক্রিম
৪) আধা কাপ কনডেন্স মিল্ক
৫) আধা চা চামচ ভ্যানিলা এসেন্স ( ঘ্রাণের জন্য)
৬) পরিষ্কার প্লাস্টিক আইসক্রিমের কন্টেইনার
পদ্ধতিঃ
প্রথমে ১টি পাকা আম ভালো করে খোসা ছাড়িয়ে হাত দিয়ে চটকে এর থেকে ভালো করে আমের ক্বাথ আলাদা করে নিতে হবে। এরপর এই আমের ক্বাথের সাথে কনডেন্স মিল্ক, টকদই, ভ্যানিলা এসেন্স ভালো করে মেশাতে হবে। ইলেক্ট্রিক বিটার দিয়ে ক্রিমকে ভালো মতো বিট করে মিশ্রণের সাথে মিশিয়ে পরিষ্কার প্লাস্টিক আইসক্রিমের কন্টেইনারে রেখে ডিপ ফ্রিজে ৭-৮ ঘন্টার মতো রেখে দিলেই তৈরি হয়ে যাবে ম্যাঙ্গো আইসক্রিম।অরেঞ্জ আইসক্রিম
উপকরণঃ
১) ২টা কমলার রস
২) ২ কাপ গুঁড়ো দুধ
৩) আড়াই কাপ পানি
৪) ১ টেবিল চামচ কর্নফ্লাওয়ার
৫) ১ কাপ চিনি
৬) ২০০ মিলি ঘন ক্রিম
৭) ১ টেবিল চামচ গলানো জেলাটিন
৮) ১ টেবিল চামচ গোলানো সিএমসি পাউডার
৯) ১ চামচ তরল গ্লুকোজ ( আব্যশিক নয়)
১০) ২টা ডিমের সাদা অংশ
১১) মেরাং ( ২ টেবিল চামচ চিনি দিয়ে)
১২) পরিষ্কার ব্লেন্ডার
পদ্ধতিঃ
প্রথমে পরিমাণ মতো গুঁড়ো দুধ, পানি, চিনি এবং কর্নফ্লাওয়ার একসঙ্গে পরিষ্কার জারে নিয়ে ভালো করে ব্লেন্ড করে হবে। ব্লেন্ডার থেকে মিশ্রণটা বের করে চুলায় জ্বাল দিয়ে ঘন করতে হবে। চুলা থেকে নামানোর সাথে সাথে গরম থাকা অবস্থায় তরল গ্লুকোজ মেশাতে হবে। এরপর এটাকে ভালো করে ঠান্ডা করে পর্যায়ক্রমে জেলাটিন এবং সিএমসি পাউডার গোলানো মিকচারটা দিয়ে ভালো করে নেড়ে মিশ্রণ তৈরি করতে হবে।
এরপর এতে পরিমাণ মতো রাখা ক্রিম এবং কমলার রস দিয়ে আবারও ভালো করে বিট করে কয়েকঘন্টার জন্য ফ্রিজে রেখে দিতে হবে। ৩ থেকে ৪ ঘন্টা পর বের করে আবার বিট করে ফ্রিজে রেখে দিতে হবে এবং এভাবে কয়েকবার করতে হবে। এরপর ডিমের সাদা অংশ এবং মেরাং দিয়ে ভালো মতো বিট করে ডিপ ফ্রিজে রেখে দিলেই হয়ে যাবে অরেঞ্জ আইসক্রিম।
ফ্রুট আইসক্রিম
উপকরণঃ
১) ১ কাপ কনডেন্স মিল্ক
২) হাফ চা চামচ ভ্যানিলা এসেন্স
৩) ১ কাপ পানি ছাড়া টকদই
৪) ১ কাপ আপনার পছন্দ মতো যেকোনো ধরনের ফলের কুঁচি
৫) ১ কাপ যেকোনো ধরনের বাদাম কুঁচি
৬) ১৭০ গ্রাম ক্রিম
৭) আধ কাপ গুঁড়া দুধ
পদ্ধতিঃ
ফলের কুঁচি এবং বাদাম কুঁচি বাদে বাকি সব উপকরণ পরিমাণ মতো মিশিয়ে পরিষ্কার ব্লেন্ডার নিয়ে ভালো মতো ব্লেন্ড করতে হবে। এরপর এতে পছন্দ মতো ফুড কালার মিশিয়ে কয়েক ঘন্টার জন্য ফ্রিজে রেখে দিতে হবে।
ফ্রিজ থেকে নামিয়ে কেটে রাখা ফল এবং বাদামের কুঁচি উপরে দিয়ে আবারও কয়েক ঘন্টার জন্য ডিপ ফ্রিজে রেখে দিলেই হয়ে যাবে ফ্রুট আইসক্রিম। ফ্রুট আইসক্রিম তৈরির ক্ষেত্রে আপনার পছন্দ মতো আম, কলা, আপেল, ডালিম, বাঙ্গি, তরমুজ ইত্যাদি ফল ব্যবহার করতে পারেন।
পেস্তা বাদামের আইসক্রিম
উপকরণঃ
১) ২ কাপ গুঁড়া দুধ
২) আড়াই কাপ পানি
৩) ১ টেবিল চামচ কর্নফ্লাওয়ার
৪) ১ টেবিল চামচ গোলানো জেলাটিন
৫) ১ টেবিল চামচ গোলানো সিএমসি
৬) পৌনে ১ কাপ চিনি
৭) ১ টিন ক্রিম
৮) ১ চা চামচ তরল গ্লুকোজ
৯) ১ কাপ পেস্তা পেস্ট
১০) সবুজ রংয়ের ফুড কালার
১১) ২টা ডিমের সাদা অংশ
১২) মেরাং ( ২ টেবিল চামচ চিনি দিয়ে তৈরি করা)
পদ্ধতিঃ
প্রথম পরিমাণ মতো গুঁড়া দুধ, পানি, চিনি, কর্নফ্লাওয়ার একসঙ্গে নিয়ে পরিষ্কার ব্লেন্ডার নিয়ে ভালো মতো ব্লেন্ড করতে হবে। ব্লেন্ড থেকে মিশ্রণটা বের করে চুলায় জ্বাল দিয়ে ঘন দ্রবণ করতে হবে। চুলা থেকে নামিয়ে গরম অবস্থায়ই তরল গ্লুকোজটা ভালভাবে মেশাতে হবে। এরপর ঠান্ডা করে জেলাটিন এবং সিএমসি দিয়ে ভালো মতো নাড়তে হবে।
এবার এরসাথে ক্রিম এবং পেস্তার পেস্ট দিয়ে ভালো মতো বিট করতে হবে। এরপর কয়েক ঘন্টার জন্য ফ্রিজে রেখে আবারও নামিয়ে বিট করে আবারও ফ্রিজে রেখে দিতে হবে। এরকম ৩-৪ বার করার পর শেষে ডিমের সাদা অংশ এবং মেরাং দিয়ে ভালো মতো বিট করে ফ্রিজে রেখে দিতে টানা ৮-১০ ঘন্টার জন্য। তাহলেই হয়ে যাবে পেস্তা আইসক্রিম।
মিক্স ফ্রুট ইয়োগার্ট আইসক্রিম
উপকরণঃ
১) ৫০০ গ্রাম পানি ছাড়া টকদই
২) ২ কাপ বিভিন্ন ধরনের মিক্স ফুড
৩) ১ কাপ ঘন ক্রিম
৪) ২ চা চামচ ভ্যানিলা এসেন্স
৫) ১/৩ কাপ গলানো সাদা চকলেট
৬) সিকি কাপ আইসিং সুগার ( চিনির শিরা)
৭) ১ কাপ তরল দুধ
৮) ১/৩ কাপ পাউডার দুধ
পদ্ধতিঃ
প্রথমে ক্রিম নিয়ে সেটাকে ভালোভাবে বিট করতে হবে। পরিমাণ মতো সাদা চকলেট নিয়ে গলিয়ে এরপর এর সাথে টকদই, চিনি, ভ্যানিলা এসেন্স মিশিয়ে ভালভাবে বিট করতে হবে। কাজটাকে সহজ করতে ইলেক্ট্রিক বিটারও ব্যবহার করা যায়। এরপর গুঁড়ো দুধ দিয়ে আবারও ভালো মতো মেশাতে হবে।
চিনির শিরায় মিশিয়ে রাখা মিক্স ফ্রুটগুলোকে ফ্রিজে রেখে জমতে দিতে হবে। কয়েকটা ঘন্টা পর ফ্রিজ থেকে মিক্স ফ্রুটগুলো বের করে এগুলো আগের করে রাখা মিশ্রণের উপর দিয়ে ডিপ ফ্রিজে টানা ৮-১০ ঘন্টা রাখলে হয়ে যাবে মিক্স ইয়োগার্ট আইসক্রিম।
মনোলোভা আইসক্রিম
উপকরণঃ
১) ২ কাপ পাউডার দুধ
২) আড়াই কাপ পানি
৩) ১ টেবিল চামচ কর্নফ্লাওয়ার
৪) ২ টেবিল চামচ চিনি
৫) ১ টিন ক্রিম
৬) ১ টেবিল চামচ গোলানো জেলাটিন
৭) ১ টেবিল চামচ গোলানো সিএমসি পাউডার
৮) ১ চা চামচ গ্লুকোজ
৯) ৫ পছন্দের কয়েকটি ফলের রস
১০) ২টা ডিমের সাদা অংশ
১১) ২ টেবিল চামচ চিনি
পদ্ধতিঃ
প্রথমে পাউডার দুধ, পানি, কর্নফ্লাওয়ার ও চিনি একসাথে নিয়ে ভালোভাবে বিট করে নিতে হবে। এরপর চুলায় জ্বাল দিয়ে ঘন করে এতে গোলানো গ্লুকোজ মেশাতে হবে। দ্রবণটি ঠান্ডা হয়ে এলে এতে জেলেটিন ও সিএমসি মিশিয়ে এরপর ক্রিম দিয়ে আবারও বিট করে ফ্রিজে ৩-৪ ঘণ্টা রেখে জমতে দিতে হবে।
এরপর এটাকে ৫ ভাগে ভাগ করে পছন্দমতো স্বাদ ও রং মিশিয়ে ভালো করে নেড়ে আবারও ফ্রিজে রেখে জমতে দিতে হবে। ২ ঘণ্টা পরপর নামিয়ে বিট করে আবারও ফ্রিজে রেখে দিতে হবে। শেষের বার ডিমের সাদা অংশ ও মেরাং দিয়ে আবারও বিট করে ফ্রিজে জমতে দেয়ার জন্য টানা ৮-১০ ঘন্টা রেখে দিতে হবে। এরপর পছন্দমতো গ্লাসে পরপর আইসক্রিমগুলো সাজিয়ে পরিবেশন করুন মজাদার মনোলোভা আইসক্রিম।
শেষ কথাঃ
এই গরমে নিজের এবং প্রিয়জনের স্বাস্থ্যের দিকে দিতে হবে বিশেষ নজর। তৃষ্ণা মেটাতে বাহিরের ঠান্ডা জাতীয় কোনো খাবার খেয়ে অসুস্থ হয়ে না যায় সেদিকে বিশেষ খেয়াল রেখে ঘরে তৈরি এসব খাবার পরিবেশন করতে পারেন প্রিয়জনকে।