মীরাক্কেলের শো টাইমে নিউজ দেখেন মীর।

‘মীরাক্কেলের সিজন ১০-এর জন্য চুক্তিপত্রে এরই মধ্যে সই করা হয়ে গেছে। তবে আমার ইচ্ছা, সিজন টেন-এর পর আমি আর মীরাক্কেলের অ্যাঙ্কারের ভূমিকায় থাকব না। আমার জায়গায় অন্য কেউ আসুক। আমি নতুন ট্যালেন্টের জন্য জায়গা ছেড়ে দিতে চাই। তখন হয়তো আমি মীরাক্কেলের মেন্টর হয়ে যাব বা অন্য ভূমিকায় চলে যাব।’ চলতি মাসের আগামী ১০ তারিখ জি বাংলা চ্যানেলে মীরাক্কেল নাইন শুরু হওয়ার আগে সংবাদমাধ্যমের কাছে এভাবেই নিজের আগামী ভাবনা চিন্তার কথা শেয়ার করলেন মীরাক্কেলের এক এবং অন্যতম সঞ্চালক স্বয়ং মীর।
সংবাদমাধ্যমের কাছে মীর জানিয়েছেন, টেলিভিশনে মীরাক্কেল ছাড়া আর কোনো শো তিনি করেন না। তবে অসংখ্য অফার আসে। রোজগারের অপশনও প্রচুর থাকে। লোকে আমাকে রিয়েলিটি শো ক্রিয়েট করতেও বলে। বাংলাদেশ থেকে তো প্রচুর টাকার অফার এসেছেও। বাংলাদেশ থেকে অনেকেই বলেছেন, বাংলাদেশের প্রোগ্রাম তো ভারতে টেলিকাস্ট হবে না। তাই আপনি এখানকার চ্যানেলে প্রোগ্রাম করুন। কিন্ত আমি রাজি হইনি। একই ধরনের অনুষ্ঠান আমি আর করব না। এটাই আমার সিদ্ধান্ত।’
মীরাক্কেলের শুরুর সময়টা নিয়ে বলতে গিয়ে মীর জানান, আজ রেডিও এবং টেলিভিশন মিলিয়ে আমার ২১ বছর পার হয়ে গেল। তবে টেলিভিশনে ২০০৬ সালে যখন মীরাক্কেল শুরু হয়, সেই সময় চ্যানেল কর্তৃপক্ষ আমাকে মাত্র তিন মাস সময় দিয়েছিল। বলেছিল, তিন মাসে ঠিকঠাক টিআরপি না উঠলে মীরাক্কেল বন্ধ করে দেওয়া হবে। তখন কনটেসট্যান্ট ফরম্যাট ছিল না। অনেকটা শেখর সুমনের ‘মুভার্স অ্যান্ড শেকারস’-এর ধাঁচে আমাকে সঞ্চালনা করতে  হতো। সেই সময় বুঝেছি, অ্যাঙ্কারিংটা কতটা শক্ত। ২৪ ঘণ্টা এই নিয়ে পড়ে থাকতে হয়।
বর্তমানে ভারতজুড়ে অসহিষ্ণুতা শব্দটি নিয়ে বেশ সরগরম। মীরাক্কেলে সেই অসহিষ্ণুতা ইস্যু নিয়ে জোকস টোকস যে মোটেই থাকবে না এমনটা কিন্তু নয়। মীর জানিয়ে দিলেন, আমির খানের বক্তব্য নিয়ে চর্চা চলছে চারিদিকে, এসব দেখে মীরাক্কেলও চুপচাপ থাকবে না। আমাদের চারপাশের নানা সামাজিক ইস্যু নিয়েও মীরাক্কেলের নিজস্ব ঢঙে বক্তব্য আগেও ছিল, এবারও থাকবে। মোদ্দা কথা, লোকে সহ্য করুক আর নাই করুক, মীরাক্কেল খবরে থাকবে। তবে মীরের মতে, মীরাক্কেল হচ্ছে বাঙালির সবচেয়ে বড় সহিষ্ণুতার পরীক্ষা। জানালেন, আমরা কী কী সহ্য করতে পারি, আর কী কী সহ্য করতে পারি না তাই নিয়ে চর্চ চলবে মীরাক্কেলে। এবার মীরাক্কেলে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের প্রতিযোগীদের পাশাপাশি একঝাঁক বাংলাদেশি প্রতিযোগীও রয়েছেন। বাংলাদেশে বর্তমান পরিস্থিতিতে বাকস্বাধীনতা নিয়ে অনেক রকমের প্রশ্ন উঠছে। তবে আপাতত সেসবের মধ্যে ঢুকছি না। রাজনীতি কিংবা সেক্স নিয়ে মজা করতে গিয়ে কাউকে রাগিয়ে দিতে চাই না।
মীরাক্কেল নাকি জি বাংলা চ্যানেলের ‘দুষ্টু হাড়হাভাতে বাচ্চা’! অন্তত এমনটাই মনে করছেন মীর। জানিয়েছেন, জি বাংলায় ‘সারেগামাপা’, ‘দাদাগিরি’ এগুলো হলো ‘সুষ্ঠু বালক ছেলে’। আর মীরাক্কেল নাকি ‘ঢপের শো’! তাই নাকি চ্যানেল এই শো’কে ত্যাজ্যপুত্র করে দিয়েছে! তাই তো মনের দুঃখে এবার গোটা মীরাক্কেল টিম একটা পাড়া ভাড়া করে নিয়েছে বলেও জানান মীর। তিনি জানান, আমি নিজেও ওই পাড়ায় এক বউদির নিচের তলায় ঘর ভাড়া নিয়েছি। জাজেরাও এসে এই পাড়ায় ঘর ভাড়া নিয়েছেন।
আজ দুই বাংলার বাঙালি দর্শকদের কাছে জনপ্রিয় এই কমেডি শো। কিন্তু মীরের গলায় অন্য সুর। জানিয়ে দিয়েছেন, আমি তো শোতে সব সময় বলি, প্লিজ চ্যানেল ঘুরিয়ে দিন। আপনারা সব শিক্ষিত মানুষ, কেন সময় নষ্ট করছেন মীরাক্কেল দেখে? কিন্তু মজার কথা হলো, যতবার নাকি এসব কথা বলে ব্রেক নিয়েছি, ততবারই লোকে চানেল চেঞ্জ না করে আমাকে নাকি এক হাত নিয়েছন! লোকে আমাদের গালাগালি করে, আবার এই শো এয়ার না থাকলে সমানে বলতে থাকে, দাদা মীরাক্কেল কবে আসছে? কেন যে চ্যানেল আমাদের পুষে রেখেছে? বুঝি না! বকাবকি করে, টাকা-পয়সা কমিয়ে দিয়েছে তাও কেউ কাউকে ছাড়তে পারছি না।
তবে মজার বিষয় হলো, যার দৌলতে মীরাক্কেলের এত জনপ্রিয়তা, সেই মীর নাকি এই শোর একটা এপিসোডও আজ পর্যন্ত টিভিতে দেখেননি। মীর নিজেই জানিয়ে দিলেন, এটা অবশ্য কোনো কুসংস্কার নয়। ময়রা যেমন নিজের বানানো মিষ্টি খায় না, আমিও তেমনি নিজের শো দেখি না। আসলে দেখলেই তো হাজারটা খুঁত বের করে ফেলব। তাই মীরাক্কেলের শো টাইমে আমি নিউজ চ্যানেল দেখি।

শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট