ফেসবুক খুলে দেওয়ার দাবিতে রাস্তায় জাবির শিক্ষার্থীরা।



ফেসবুকসহ বন্ধ থাকা অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম খুলে দেওয়ার দাবিতে এবার রাস্তায় নামল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তারা জনগণের মতপ্রকাশের স্বাধীনতাবিরোধী সব আইন বাতিল  করার দাবি জানিয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীবৃন্দ’র ব্যানারে মানববন্ধন করে এই দাবি জানানো হয়।

মানববন্ধনে অংশ নেওয়া বক্তারা দাবি করেন, ফেসবুকের কল্যাণেই গণজাগরণ মঞ্চের মতো জাগরণ সৃষ্টি হয়েছিল। অথচ নিরাপত্তার অজুহাতে গত নভেম্বর মাসে বাংলাদেশে ফেসবুক, ভাইবার ও হোয়াটঅ্যাপস  বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সন্ত্রাস থেমে থাকেনি, মসজিদে ঢুকে প্রকাশ্যে গুলি করে খুন করার মতো ঘটনা ঘটেছে। যখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো বাংলাদেশে জনপ্রিয় হয়নি তখনো সারা দেশে একযোগে সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে। তাই নিরাপত্তার খোঁড়া অজুহাতে যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধের সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এ ধরনের সিদ্ধান্ত শুধু জনসাধারণের কথা বলার জায়গা সঙ্কুচিত করা ছাড়া কোনো বড় ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডরোধে কার্যকর হবে, অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে সেটি বলা যাচ্ছে না।

মানববন্ধনে সংহতি প্রকাশ করে দর্শন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সৈয়দ নিজার আলম বলেন, ‘ফেসবুক বাংলাদেশে বিকল্প গণমাধ্যম হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিল। স্বাধীন মত প্রকাশের স্বার্থে অবিলম্বে এটি খুলে দেওয়া উচিত।’

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি জোবায়ের টিপু বলেন, ‘সাধারণ জনগণের জন্য ফেসবুক বন্ধ রেখে সরকারি দল এবং সরকারের লোকজন বিকল্প পথে ফেসবুক ব্যবহার করে দলের এবং সরকারের বিভিন্ন প্রচারণা চালাচ্ছে । ব্যাপারটা খুবই হাস্যকর।’

বক্তারা আরো বলেন, নিরাপত্তার জন্য দু-চারদিন ফেসবুক ও অন্যান্য যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ রাখার যৌক্তিকতা থাকতে পারে। কিন্তু অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখার মানে কী? নিরাপত্তার অজুহাতে সরকার জনগণের স্বাধীন মতপ্রকাশকে রুদ্ধ করছে। এ ছাড়া স্বাধীন মত প্রকাশে বাধা সৃষ্টিকারী যেকোনো আইন বাতিলের দাবি জানান তাঁরা।

এ সময় অন্যদের মধ্যে আরো বক্তব্য দেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক সুস্মিতা মরিয়ম, সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘আনন্দন’র সভাপতি মিজানুর রহমান টিটু, নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী অনিক ভূঞা, ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী সরদার মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম প্রমুখ।

গত ১৮ নভেম্বর দুপুরে বাংলাদেশে বন্ধ করে দেওয়া হয় ফেসবুক, ভাইবার, হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জারের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও অ্যাপ্লিকেশনগুলো (অ্যাপস)। সেদিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল জানান, নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা থাকায় এসব সাময়িকভাবে বন্ধ করা হয়েছে।
ওই দিন সকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রেখে রায় দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। রায় ঘোষণার পরপরই দেশে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ ছাড়া প্রায় সোয়া ঘণ্টা বন্ধ থাকে সারা দেশের ইন্টারনেট সংযোগও।

কবে নাগাদ ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম খুলে দেওয়া হবে—জানতে চাইলে গত ২১ নভেম্বর ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বলেন, জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ থাকবে। তিনি বলেন, ‘সাময়িক নিরাপত্তার জন্য, জনস্বার্থ, জননিরাপত্তার স্বার্থে যতদিন বন্ধ রাখা প্রয়োজন, ঠিক ততদিনই বন্ধ থাকবে। যখন জননিরাপত্তা নিশ্চিত হবে এবং আমাদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সেটি নিশ্চিত করবে, তখনই আমরা এটা খুলে দেব।’
ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়ে গত ২৩ নভেম্বর ঝিনাইদহ-২ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য তাহজীব আলম সিদ্দিকী জাতীয় সংসদ ভবনে দশম জাতীয় সংসদের অষ্টম অধিবেশনে বক্তব্য দেন। অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি সংসদে বলেছিলেন, ‘সব প্রযুক্তির ভালো-মন্দ দুটি দিকই আছে। প্রযুক্তির কুফল চিন্তা করে যদি আমরা প্রযুক্তির ব্যবহারই বন্ধ করে দিতাম, তাহলে হয়তো মানবসভ্যতার এই অকল্পনীয় উৎকর্ষতা লাভ হতো না। প্রযুক্তির অপব্যবহারে আরো উন্নত প্রযুক্তির উদ্ভাবন এবং ব্যবহার ঘটেছে। কিন্তু সরকার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ করে যদি ভেবে নেয়, ফেসবুক, ভাইবার, হোয়াটসঅ্যাপ একদম বন্ধ হয়ে গেছে, তা মোটেই সঠিক নয়। অনেকেই নতুন নতুন অ্যাপস ব্যবহার করে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছেন এবং নাশকতাবাদীরাও চাইলে সেটি করতে পারবেন না-তা আমার বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়।’
একই দাবিতে গত ২৭ নভেম্বর জাতীয় প্রেসক্লাব ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) রাজু ভাস্কর্যের সামনে ব্যানার হাতে নিয়ে প্রতিবাদ জানান রাজধানীর তেজগাঁও কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের স্নাতক (সম্মান) তৃতীয় বর্ষের ছাত্র মো. মোখলেছুর রহমান।
সর্বশেষ গত ২ ডিসেম্বর তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের (এআইইউবি) ম্যাস কমিউনিকেশন এবং মিডিয়া আর্টস বিভাগ আয়োজিত মিডিয়া বিতর্ক প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে বলেন, ‘ফেসবুক সাময়িক বন্ধ, অচিরেই তা খুলে দেওয়া হবে।’

শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট