ফেসবুকের পাসওয়ার্ড এখন আপনি চাইলেও আর গোপন করতে পারবেন না !


ফেসবুক নিঃসন্দেহে একটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম । কারনে -অকারনে অনেক মানুষই তার অবসরের বেশিরভাগ সময় এখন কাটান ফেসবুকে । এককথায় বলা যেতে পারে নিত্য জীবনে অসংখ্য মানুষের প্রয়োজনের বড় একটা অংশ এখন ফেসবুক । দৈনন্দিন ব্যাবহারের নানা ধরনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে সমৃদ্ধ আপনার ফেসবুক একাউন্টটির পাসওয়ার্ড যদি কেউ জেনে যায় তবে কি করবেন ? এই কথা শুনে অনেকটাই আঁতকে উঠেছেন তাই না । তবে হ্যাঁ, সত্যিই এবার আপনি চাইলেও আর ফেসবুকের পাসওয়ার্ড গোপন রাখতে পারবেন না ! এখন বাংলাদেশ সরকার চাইলেই সন্দেহভাজন যে কারও ফেসবুকে লগইন করতে পারবে।
সম্প্রতি দেশে ঘটে যাওয়া কয়েকটি হামলার ঘটনার পর নাশকতাকারীরা ফেসবুক ব্যবহার করে তাদের আইডিগুলো নিষ্ক্রিয় করে দেয়। ফলে এ সংক্রান্ত পূর্ণাঙ্গ তথ্য উদ্ধার করতে সক্ষম হয়নি সরকারের সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু এখন থেকে আইডি নিষ্ক্রিয় করা হলেও সংশ্লিষ্ট ফেসবুকের যাবতীয় তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা যাবে। এজন্য আনা হয়েছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি।
এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, আইনশৃংখলা বাহিনী ও সরকারের তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের যে সক্ষমতা আছে তা আরও বৃদ্ধি করা হয়েছে। এ প্রক্রিয়া চলমান থাকবে। আধুনিক বিশ্ব যেভাবে তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর সন্ত্রাস দমন করে, তেমনটি বাংলাদেশেও শুরু হয়েছে। আধুনিক ডাটা সেন্টার স্থাপন, নানা ধরনের সফটওয়্যার ব্যবহার, তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ তৈরি করাসহ এ সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এজন্যই ঢেলে সাজানো হচ্ছে ‘ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি)। তিনি বলেন, ‘সরকার এখন ইচ্ছা করলেই যে কারও ফেসবুকে প্রবেশ করতে পারবে। আশার কথা হচ্ছে, এখন এ ধরনের প্রযুক্তি আমাদের হাতে এসেছে। তবে আমাদের টার্গেট তারাই যারা অপরাধ করবে।’
জানা গেছে, জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে তথ্যপ্রযুক্তির ঝুঁকি মোকাবেলায় নানা উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন হামলা ও নাশকতার ঘটনায় গোয়েন্দারা সাইবার সন্ত্রাসীদের দৌরাত্ম্য গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেন। গোয়েন্দাদের সুপারিশের পর সরকার তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর সংস্থাগুলোকে আরও নজরদারি করতে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা প্রদান, অবকাঠামো নির্মাণ, মনিটরিং সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে সরকার ২৩ কোটি ১৮ লাখ টাকার বরাদ্দও দেয়।
আইনশৃংখলা বাহিনীর সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, গুলশানে ২৮ সেপ্টেম্বর ইতালি নাগরিক সিজারি তাভেল্লা ও এর চারদিন পর রংপুরে জাপানি নাগরিক কুনিও হোশি হত্যার পর কয়েকটি বিষয় সামনে চলে আসে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- যারা বিভিন্ন ধরনের হত্যাচেষ্টা, হত্যা বা হুমকি দিচ্ছে এরা বেশির ভাগ সময় সামাজিক মাধ্যমগুলো ব্যবহার করছে। অপরাধী চক্রের সদস্যরা সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে নানা ধরনের অপপ্রচার চালায়। নাশকতাকারীরা সামাজিক মাধ্যম, ব্লগ ও বিভিন্ন ওয়েবপেজে নিজেদের মধ্যে তথ্য আদান-প্রদান এবং পরামর্শ সভাও করে। এসব সন্ত্রাসীকে আইনের আওতায় আনতে তথ্যপ্রযুক্তির নজরদারি বাড়ানোর ওপর গোয়েন্দারা সরকারের কাছে সুপারিশ করেন। এরপর জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং নতুন প্রজন্মের এসব সাইবার সন্ত্রাস মোকাবেলায় সরকার প্রযুক্তির সক্ষমতা বাড়াতে নানা পদক্ষেপ নেয়। এরই অংশ হিসেবে ফেসবুক নজরদারি করতে প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি সংগ্রহ করা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে মনিটরিং সুবিধা প্রদান, টেলিযোগাযোগ খাতের উদীয়মান ঝুঁকি মোকাবেলা, টেলিযোগাযোগ অ্যাপ্লিকেশন/সফটওয়্যারের অপব্যবহার এবং সাইবার ক্রাইম প্রতিরোধে ২০১৪ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন ‘ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি) গঠন করা হয়।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) মন্ত্রণালয়ের একটি সুত্রে জানা যায় , বর্তমানে  সাইবার অপরাধীরা মনে করছে যেহেতু মোবাইলে একে অপরের সাথে কথা বললে বা বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ করলে আইনশৃংখলা বাহিনী তাদের নাশকতার তথ্য সহজেই জানতে পায়। তাই তারা ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগের সাইট গুলোতে নিজেদের মধ্যে ক্লোজ গ্রুপে কৌশলগত নানা ধরনের শলাপরামর্শ করে। এ ধরনের সাইবার অপরাধীদের নিষ্ক্রিয় করতে সরকার কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এখন যদি তারা ফেসবুক যাবতীয় তথ্য নিষ্ক্রিয় করে দেয় এর পরেও তথ্য উদ্ধার করা যাবে। আগেও কিছু তথ্য উদ্ধার করা গেলেও এখন পুরোপুরি তথ্যই উদ্ধার করা সম্ভব। এর সাথে প্রযুক্তি ব্যবহারের সঙ্গে মনিটরিং ব্যবস্থাও জোরদার করা হয়েছে। এখন যে কারও ফেসবুকে প্রবেশ করার মতো সক্ষমতা রয়েছে সরকারের।

শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট