জোনাকি এক রহস্যময়ী প্রাণী। সাগরের তলদেশে
অনেক প্রাণী আছে, যারা আলো জ্বালাতে পারে। কিন্তু স্থলভাগে শুধু জোনাকিরই
আছে সেই ক্ষমতা। এই আলো ওরা পেল কোথায়? কীভাবেই বা জ্বলে ওই আলো? আলো মানেই
তাপ, জোনাকি কীভাবে সেই তাপ সহ্য করে? কিংবা আলো জ্বালাতে গিয়ে জোনাকি
জ্বলে-পুড়ে ছাই হয়ে যায় না কেন? জোনাকির দেহের পেছন দিকে বক্স লাইটের মতো
একটা জিনিস আছে। তার ভেতরে থাকে দুই ধরনের রাসায়নিক পদার্থ। লুসিফেরাস ও
লুসিফেরিন। লুসিফেরাস আলো উৎপন্ন করে।
যখন কোনও বস্তু থেকে আলো উৎপন্ন হয়,
সেখানে তাপ উৎপন্ন হয়। বৈদ্যুতিক বাল্বের জ্বালানোর আধ ঘণ্টার মধ্যে
বাল্বটা ভীষণ গরম হয় ওঠে। টিউব লাইট কিংবা অ্যানার্জি সেভিং বাল্ব বেশ গরম
রড। তবে সাধারণ বাল্বের তুলণায় অ্যানার্জি সেভিং লাইটগুলো কম তাপ উৎপন্ন
করে। এজন্যই এদেরকে অ্যানার্জি সেভার বলে। সাধারণ বৈদ্যুতিক বাল্ব যে
পরিমাণ বিদ্যুৎ শক্তি নেয়, তার নব্বুই ভাগ তাপ উৎপাদনে ব্যয় হয়। বাকি দশভাগ
থেকে আসে আলো। এনার্জি সেভার তাপ উৎপন্ন করে। তুলনায় আলো উৎপন্ন করের অনেক
বেশি। জোনাকি পোকার ক্ষেত্রেও অ্যানার্জি সেভের ঘটনা ঘটে। তবে জোনাকি
পোকার এনার্জি সেভিং ক্ষমতা টিউব লাইটের চেয়ে অনেক অনেক বেশি। আসলে জোনাকির
আলো একেবারে ঠাণ্ডা। তাই নিজের আলোয় জোনাকি জ্বলে-পুড়ে ছাই হয়ে যায় না।
লুসিফেরাসের কাজ হচ্ছে জোনাকি পোকার খাদ্য
শক্তিকে কাজে লাগিয়ে আলো ও তাপশক্তি উৎপন্ন করা। লুসিফেরিন উৎপন্ন তাপকে
ঠাণ্ডা করে সেগুলোকেও আলোতে পরিণত করে। আবার উৎপন্ন আলোর বিচ্ছুরণ ঘটানো
কাজটাও করে লুসিফেরিন। সুতরাং জোনাকি পোকা হলো পৃথিবীর সর্বোকৃষ্ট আলো
উৎপাদনকারী প্রাণি।
অন্ধকারে পথ দেখার জন্য জোনাকি আলো জ্বালে
না। জোনাকির আলো আসলে তার ভাষা। মানুষ ভাব বিনিময়ের জন্য কথা বলে। কথা বলে
নিজের মনের কথা আরেক জনকে বোঝাতে পারে। কিন্তু বেশির ভাগ কীট-পতঙ্গই মুখ
দিয়ে শব্দ করতে পারে না। কেউ ডানা ঝাপটে, কেউ পা দিয়ে শব্দ করে ভাবের
আদান-প্রদান করে। জোনাকি সেটাও করতে পারে না। তার ভাব বিনিময়ের একমাত্র
মাধ্যম হলো তার আলো।
জোনাকির আলো একটানা জ্বলে না। একবার জ্বলে
এবং নেভে। সাধারণত সমুদ্রের সিগন্যাল লাইটগুলোও এভাবে জ্বলে আরে নেভে। তাই
বলাই যায় জোনাকি এভাবে আলো জ্বালিয়ে নিভিয়ে অন্যদের কাছে সিগন্যাল পাঠায়।
মানে ভাব বিনিময় করে। প্রজননের জন্যই জোনাকি মূলত আলো জ্বালায়।
পুরুষ জোনাকিগুলো উড়তে উড়তে আলো জ্বালে। অধাৎ সিগন্যাল পাঠায়। সিগন্যাল পাঠায় স্ত্রী জোনাকির উদ্দেশ্যে। স্ত্রী জোনাকিরা তখন ঝোপের আগায় কিংবা ঘাসের ওপর বসে থাকে। পুরুষ জোনাকির সিগন্যাল বা সঙ্কেত এসে ধরা পড়ে তাদের মস্তিষ্কে। স্ত্রী জোনাকিরা তখন সেই সঙ্কেতে সাড়া দেয়। নিজেরাও সঙ্কেত পাঠায়। সঙ্কেত লক্ষ করে ছুটে যায় পুরুষ জোনাকির কাছে। তারপর তাদের বন্ধুত্ব হয়। তারপর মিলন।
পুরুষ জোনাকিগুলো উড়তে উড়তে আলো জ্বালে। অধাৎ সিগন্যাল পাঠায়। সিগন্যাল পাঠায় স্ত্রী জোনাকির উদ্দেশ্যে। স্ত্রী জোনাকিরা তখন ঝোপের আগায় কিংবা ঘাসের ওপর বসে থাকে। পুরুষ জোনাকির সিগন্যাল বা সঙ্কেত এসে ধরা পড়ে তাদের মস্তিষ্কে। স্ত্রী জোনাকিরা তখন সেই সঙ্কেতে সাড়া দেয়। নিজেরাও সঙ্কেত পাঠায়। সঙ্কেত লক্ষ করে ছুটে যায় পুরুষ জোনাকির কাছে। তারপর তাদের বন্ধুত্ব হয়। তারপর মিলন।
শত শত জোনাকির সঙ্কেত থেকে সঠিক সঙ্কেতটা স্ত্রী জোনাকি চিনতে পারে কীভাবে?
আসলে প্রত্যেক জোনাকির সঙ্কেতের ধরণ আলাদা
আলাদা। স্ত্রী জোনাকির যে সঙ্কেতটা পছন্দ হয়, ঠিক সেই পুরুষটাকে খুঁজে বের
করে। পৃথিবীতে নানা প্রজাতির জোনাকি আছে। শুধু মাত্র নিজের প্রজাতির
মধ্যেই জোড়া বাঁধে জোনাকিরা। প্রত্যেক জোনাকিই আলোর সঙ্কেতের ধরণ দেখে
বুঝতে পারে সেটা তার স্বজাতির না অন্য প্রজাতির। অন্য প্রজাতির আলোর
সঙ্কেতে সাড়া দেয় না কোন স্ত্রী বা পুরুষ জোনাকি।