মাশরাফির দলকে হারিয়ে শীর্ষে সাকিবের রংপুর।

মাশরাফির দলকে হারিয়ে শীর্ষে সাকিবের রংপুর।
আগের দিন দু দলেরই শেষ চার নিশ্চিত হয়ে গেছে। তাই রংপুর রাইডার্স বনাম কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের লড়াইয়ে অন্য উৎকণ্ঠা ছাপিয়ে মুখ্য হয়ে পড়েছিল মর্যাদার বিষয়টি। সেই মর্যাদার লড়াইয়ে রংপুর বিজয়ী। মাশরাফির কুমিল্লাকে ২১ রানে হারানোয় আপাতত বিপিএলের পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে সাকিবের দল।
দশম ম্যাচ অর্থাৎ লিগ পর্বের শেষ ম্যাচ খেলতে নেমে সপ্তম জয়ের দেখা পাওয়া রংপুরের সংগ্রহ ১৪ পয়েন্ট। এক ম্যাচ কম খেলা কুমিল্লার পয়েন্ট ১২।
মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে ১৫৪ রানের জয়ের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ঝড়ের গতিতে শুরু করেছিল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস। সাকিব আল হাসানের করা প্রথম ওভারে ১০ রান তুলে নেন ইমরুল কায়েস। আরাফাত সানির করা তৃতীয় ওভারে আসে ১১ রান। ইমরুলের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে চার ওভার শেষে স্কোর দাঁড়ায় ৪৫/০।
কিন্তু জাতীয় দলের বাঁহাতি ওপেনারের বিদায়ের পর খেই হারিয়ে ফেলে কুমিল্লা। ষষ্ঠ ওভারে বল করতে এসে প্রথম বলেই ইমরুলকে ফিরিয়ে দেন ড্যারেন স্যামি। অফ স্টাম্পের বেশ বাইরের বল তাড়া করতে গিয়ে থার্ডম্যানে আরাফাত সানির হাতে ধরা পড়া ইমরুলের ২৪ বলে ৩৮ রানের আক্রমণাত্মক ইনিংসে ছিল ছয়টি চার ও একটি ছক্কা।
দলীয় ৪৮ রানে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে ইমরুলকে হারানোর পর নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়েছে কুমিল্লা। আহমেদ শেহজাদ (১০) আর শুভাগত হোম (১২) একটি করে ছক্কা মেরে রানের গতি বাড়ানোর চেষ্টা করলেও আস্কিং রেট বেড়ে যাচ্ছিল লাফিয়ে-লাফিয়ে।
শেষ পাঁচ ওভারে পাঁচ উইকেট হাতে নিয়ে প্রয়োজন ছিল ৬৩ রান। তবে তখনো ক্রিজে শোয়েব মালিক আর আন্দ্রে রাসেলের মতো দুজন আক্রমণাত্মক ব্যাটসম্যান থাকায় আশায় বুক বেঁধেছিল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস।
রাসেল (৯) অবশ্য কুমিল্লা-ভক্তদের প্রত্যাশা মেটাতে পারেননি। সাকিবকে ছক্কা মারার পরের বলে তুলে মারতে গিয়ে ক্যাচ দিয়েছেন থিসারা পেরেরাকে। অধিনায়ক মাশরাফিও ছক্কা মারার পরের বলে ক্যাচ দিয়ে হতাশ করেছেন দলকে।
প্রতিপক্ষ ১৮ বলে ৪৩ রানের কঠিন লক্ষ্যের সামনে পড়ে গেলেও শোয়েব মালিক ছিলেন বলে রংপুর রাইডার্স ঠিক নিশ্চিন্ত হতে পারছিল না। ১৮তম ওভারে দুর্দান্ত বোলিং করে দলের দুশ্চিন্তা দূর করে দেন পেরেরা। সেই ওভারে কোনো রান না দিয়ে মালিকের (১৫) উইকেট পেয়ে যান শ্রীলঙ্কার এই অলরাউন্ডার। ১৮ রানে তিন উইকেট নিয়ে পেরেরাই রংপুরের সেরা বোলার। দুটি করে উইকেট নিয়েছেন মোহাম্মদ নবী ও সাকলাইন সজীব।

ফেসবুক খোলার বিষয়ে অচিরেই সিদ্ধান্ত : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

ফেসবুক খোলার বিষয়ে অচিরেই সিদ্ধান্ত : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক খোলার বিষয়ে অচিরেই সিদ্ধান্ত নিচ্ছে সরকার। তবে তার আগে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করতে চান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে খাগড়াছড়ির রামগড় থানা ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন শেষে স্থানীয় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, ‘স্যার, আমরা ফেসবুক এ বছর পাচ্ছি না কি নতুন বছরে পাচ্ছি।’ প্রশ্ন শুনেই হেসে ওঠেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘ফেসবুক দেশের প্রয়োজনে বন্ধ করা হয়েছিল। ফেসবুক অথরিটির সঙ্গে আমাদের আলাপ হয়েছে। আমরা এখন আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা বাহিনীর সঙ্গে বসে খুব অচিরেই সিদ্ধান্ত নিচ্ছি।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের ব্যাপারেও প্রশ্ন করেন সাংবাদিকরা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘পার্বত্য অঞ্চলে শান্তি রক্ষার জন্য আমরা শান্তিচুক্তি করেছি। এখনো আমরা ক্রমাগতভাবে, আমরা মনে করি এই শান্তি চুক্তি অব্যাহত রাখা আমাদের কর্তব্য, আমরা এটা রাখব। আমরা মনে করি, দেশ শান্তিতে না থাকলে আমরা কাঙ্ক্ষিত জায়গায় যেতে পারব না।’
১ জানুয়ারি থেকে পাহাড়ের অনিবন্ধিত আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলের অসহযোগ আন্দোলন প্রসঙ্গে আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, ‘আমি সবার প্রতি আহ্বান রাখব আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে শান্তি প্রক্রিয়া চলতে থাকবে। এতে সবাই সহযোগিতা করবে। যারা অশান্তি সৃষ্টি করতে চায়, তাদের ভুল বোঝাবুঝির শেষ হবে। শান্তি, পার্বত্য চট্টগ্রামে থাকবে। এটাই আমি বিশ্বাস করি।’
পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রামগড় থানা ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন উপলক্ষে আয়োজিত এক সুধী সমাবেশে বক্তব্য দেন।
পুলিশ সুপার মো. মজিদ আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সুধী সমাবেশে অন্যদের মধ্যে স্থানীয় সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা বক্তব্য দেন।
অনুষ্ঠানে গুইমারা রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. তোফায়েল আহমেদ, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মো. শফিকুল ইসলাম, খাগড়াছড়ি আর্মড পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারের অতিরিক্ত ডিআইজি জমশের আলীসহ ঊর্ধ্বতন সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধির  প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, গত বছর পুলিশ বাহিনীতে ৩০ হাজার সদস্য নিয়োগ করা হয়েছে। এ বছর ৫০ হাজার নতুন সদস্য নিয়োগ করা হবে।
দেশের বিরুদ্ধে বিদেশি ষড়যন্ত্রের প্রতি ইঙ্গিত করে আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর পাশাপাশি তা মোকাবিলায় এগিয়ে আসতে হবে। আমাদের দেশ জঙ্গির দেশ নয়, শান্তিপ্রিয় বাংলাদেশিদের দেশ। ধর্ম যার যার, দেশ সবার- এ মন্ত্রে কে হিন্দু কে মুসলিম, কে বৌদ্ধ কে খ্রিস্টান ভেদাভেদ না করে সবাই মিলে দেশকে এগিয়ে নেব।’

প্রায় সাড়ে ছয় কোটি টাকা ব্যয়ে ছয় তলা ফাউন্ডেশনের ওপর অত্যাধুনিক সুযোগ সুবিধা নিয়ে রামগড় মডেল থানা ভবনটি নির্মাণ করা হবে।
গত ১৮ নভেম্বর দুপুরে বাংলাদেশে বন্ধ করে দেওয়া হয় ফেসবুক, ভাইবার, হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জারের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও অ্যাপ্লিকেশনগুলো (অ্যাপস)। সেদিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল জানান, নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা থাকায় এসব সাময়িকভাবে বন্ধ করা হয়েছে।
ওই দিন সকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রেখে রায় দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। রায় ঘোষণার পর পরই দেশে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ ছাড়া প্রায় সোয়া ঘণ্টা বন্ধ থাকে সারা দেশের ইন্টারনেট সংযোগও।
কবে নাগাদ ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম খুলে দেওয়া হবে- জানতে চাইলে গত ২১ নভেম্বর ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বলেন, জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ থাকবে। তিনি বলেন, ‘সাময়িক নিরাপত্তার জন্য, জনস্বার্থ, জননিরাপত্তার স্বার্থে যত দিন বন্ধ রাখা প্রয়োজন, ঠিক তত দিনই বন্ধ থাকবে। যখন জননিরাপত্তা নিশ্চিত হবে এবং আমাদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সেটি নিশ্চিত করবে, তখনই আমরা এটা খুলে দেব।’
ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়ে গত ২৩ নভেম্বর ঝিনাইদহ-২ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য তাহজীব আলম সিদ্দিকী জাতীয় সংসদ ভবনে দশম জাতীয় সংসদের অষ্টম অধিবেশনে বক্তব্য দেন।
একই দাবিতে গত ২৭ নভেম্বর জাতীয় প্রেসক্লাব ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) রাজু ভাস্কর্যের সামনে ব্যানার হাতে নিয়ে প্রতিবাদ জানান রাজধানীর তেজগাঁও কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের স্নাতক (সম্মান) তৃতীয় বর্ষের ছাত্র মো. মোখলেছুর রহমান।
এরপর গত ২ ডিসেম্বর তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের (এআইইউবি) ম্যাস কমিউনিকেশন এবং মিডিয়া আর্টস বিভাগ আয়োজিত মিডিয়া বিতর্ক প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে বলেন, ‘ফেসবুক সাময়িক বন্ধ, অচিরেই তা খুলে দেওয়া হবে।’
পরের দিন ৩ ডিসেম্বর ফেসবুকসহ বন্ধ থাকা অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম খুলে দেওয়ার দাবিতে রাস্তায় নামেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীবৃন্দ’র ব্যানারে মানববন্ধন করে জনগণের মতপ্রকাশের স্বাধীনতাবিরোধী সব আইন বাতিল করার দাবি জানান।
ফেসবুক খুলে দেওয়ার দাবিতে ৪ ডিসেম্বর রাস্তায় নামেন লেখক, শিল্পী, সংস্কৃতিকর্মী, অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট ও অনলাইন ব্যবসায়ীরা। তারা রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে অবস্থান ধর্মঘট পালন করে। এতে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেয়। পরের দিন একই স্থানে মানববন্ধন করে ই-কমার্স ব্যবসায়ীরা।
৬ ডিসেম্বর সচিবালয়ে ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘বৈঠকে আমরা ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমাদের দেশের নিরাপত্তাসংক্রান্ত কিছু বিষয় তুলে ধরেছি, যেগুলো আমাদের কাছে হুমকিস্বরূপ মনে হয়েছে। আমরা তাদের বিষয়গুলো বোঝাতে সক্ষম হয়েছি। তারা বিষয়গুলো নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে।’
‘আমি বলব, আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে। ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যে আলোচনা হয়েছে সেগুলো নিয়ে এখন আমরা নিজেরা আলোচনায় বসব। তার পরই ফেসবুক খুলে দেওয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেব’, বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
এর আগে গত ৩০ নভেম্বর তারানা হালিম ফেসবুক কর্তৃপক্ষের কাছে এর অপব্যবহার নিয়ে একটি ইমেইল পাঠান। এর পরের দিনই ফেসবুক কর্তৃপক্ষ বৈঠকে বসার আহ্বানে সাড়া দিয়ে ইমেইল পাঠায়।
ইমেইলে বাংলাদেশে ফেসবুকের ব্যবহারকারী তিন কোটি। এর সুনাম রক্ষায় ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠকে বসার ব্যাপারে বিবেচনা করা উচিত বলে উল্লেখ করা হয়।
ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ করার প্রতিবাদে ৭ ডিসেম্বর ‘নির্বাক অবস্থান কর্মসূচি পালন করে সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। একই দিন সন্ধ্যায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এনটিভি অনলাইনকে বলেন, যথা শিগগিরই ফেসবুক খুলে দেওয়া হবে। এজন্য সবাইকে ‘একটু ধৈর্য’ ধরার আহ্বান জানান তিনি।

আপাতত ফেসবুক খোলার ভাবনা নেই–টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়

আপাতত ফেসবুক খোলার ভাবনা নেই–টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়
‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং নিরাপত্তার স্বার্থে’ ফেসবুক, ভাইবার, হোয়াটসঅ্যাপসহ ইন্টারনেটে যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যম বন্ধ করে সরকার এ লক্ষ্যে সফল হয়েছে বলে মনে করেন নীতিনির্ধারকেরা। তবে সরকার এখন নিরাপত্তার বিষয়টিকে আরও বড় পরিসরে চিন্তা করছে। ফলে শিগগির ফেসবুক খোলার কোনো আশ্বাস তাঁদের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি।
তাঁরা বলছেন, নিরাপত্তার জন্য দীর্ঘমেয়াদি নানা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। প্রযুক্তি দিয়েই প্রযুক্তিনির্ভর অপরাধ মোকাবিলার বিষয়টি মাথায় রেখে প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়াতে ইতিমধ্যে কাজ শুরু হয়েছে। এ ছাড়া ফেসবুকের সঙ্গে আলোচনার ধারাবাহিকতায় ইতিবাচক ফল আসবে বলে তাঁদের ধারণা।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল গতকাল সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘যে উদ্দেশ্য নিয়ে আমরা এসব মাধ্যম বন্ধ রেখেছি, তাতে আমরা সফল হয়েছি। আমাদের মূল লক্ষ্য ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও জাতীয় নিরাপত্তা। এ সময়ে আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো নানাভাবে উপকৃত হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘নাশকতাকারীদের ওপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজর রাখতে সুবিধা হয়েছে। নাশকতা ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছি।’
নিরাপত্তার দিক থেকে সফল হলে কবে খোলা হচ্ছে এসব মাধ্যম—এ প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এসব মাধ্যম বন্ধ থাকার কারণে অনেকের, বিশেষ করে আমাদের মেধাবী তরুণদের সমস্যা হচ্ছে। যেহেতু বিষয়টি নিরাপত্তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, তাই শিগগিরই সার্বিক অবস্থা পর্যালোচনা করে এসব মাধ্যম খুলে দেওয়া হবে।’
টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সূত্র বলছে, ১৯ দিন ধরে ইন্টারনেটে যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যম বন্ধ থাকা অবস্থায় এসব অপরাধের মোকাবিলায় প্রযুক্তিগত সক্ষমতা অর্জন এবং দক্ষ জনবল তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়। সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার কেনার উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ফেসবুকের সঙ্গে আলোচনা চলছে। সে উদ্যোগের ধারাবাহিকতায় গত রোববার ফেসবুকের দুই প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠক করেন তিন মন্ত্রী।
ওই বৈঠকে ফেসবুকের পক্ষে ছিলেন প্রতিষ্ঠানটির দক্ষিণ এশিয়ার পাবলিক পলিসি ম্যানেজার দীপালি লিবারহেন এবং আইনসংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ বিক্রম লাংঘে। সরকারের পক্ষে ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি-বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ এবং গোয়েন্দা বাহিনীর শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা।
বৈঠকে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ফেসবুকের নানা ধরনের অপব্যবহারসহ নেতিবাচক বিষয়গুলো তুলে ধরা হয় ফেসবুকের প্রতিনিধিদের কাছে। বৈঠক সূত্র বলছে, সব ধরনের পোস্ট আগে থেকে তদারকির জন্য বাংলাদেশে ফেসবুকের অ্যাডমিন চেয়ে এখানে আলাদা একটি সার্ভার স্থাপনের অনুরোধ জানানো হয়েছে। যেকোনো বিষয়ে সরকারের অনুরোধে দ্রুত সাড়াও চেয়েছে বাংলাদেশ। তবে প্রতিনিধিদলের সদস্যরা তাৎক্ষণিক কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারেননি। তাঁরা বিষয়টি ভেবে দেখার কথা জানিয়ে বলেছেন, ফিরে গিয়ে এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাবেন।
বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে বৈঠক ও প্রস্তাব সম্পর্কে ফেসবুকের অবস্থান জানতে প্রথম আলোর পক্ষ থেকে ওই প্রতিষ্ঠানের কাছে ই-মেইল পাঠানো হয়। তবে গতকাল রাতে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত কোনো জবাব পাওয়া যায়নি।
তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ফেসবুকের সঙ্গে আলোচনাটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। তাঁরা আমাদের খুব দ্রুত সিদ্ধান্ত জানাবেন। তবে সেটা অবশ্যই দু-এক দিনের মধ্যে সম্ভব হবে না।’
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান প্রকৌশলী শাহজাহান মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যে আলোচনা হয়েছে, তাতে তারা আমাদের সহযোগিতা করতে রাজি হয়েছে। বাংলাদেশে ফেসবুকের সার্ভার স্থাপন হলে ফেসবুকের মাধ্যমে যেসব অপরাধ হয়, তা অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে।’
বিটিআরসি চেয়ারম্যান মনে করেন, কারিগরি দিক থেকে তাঁর সংস্থার সক্ষমতা ইতিমধ্যে অনেক বেড়েছে। সামনের দিনগুলোতে আরও বাড়বে। তিনি বলেন, ‘আশা করছি আগামী দু-এক মাসের মধ্যে সাইবার নিরাপত্তার বিষয়ে আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি দেখতে পাবেন।’
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া বিএনপির নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও জামায়াতে ইসলামীর নেতা আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের রিভিউ শুনানির রায় ঘোষণার দিন গত ১৮ নভেম্বর থেকে বাংলাদেশে ফেসবুক, ভাইবার, হোয়াটসঅ্যাপসহ ইন্টারনেটে যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যম বন্ধ করে দেয় সরকার। সেই থেকে এসব মাধ্যম বন্ধ আছে, যদিও বিকল্প ব্যবস্থায় কেউ কেউ তা ব্যবহার করছেন।