প্রতিদিন বাড়ছে অনলাইনে কাজের সুযোগ এবং সাথে সাথে বাড়ছে নিজের পছন্দ মত স্কিল ডেভেলপমেন্ট করে আউটসোর্সিং বা ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে ইনকামের সুযোগ।
করোনা পরবর্তী বিশ্বে দিন দিন বাড়ছে ফ্রিল্যান্সার বা মুক্ত পেশাজীবীদের কাজের পরিমাণ। কারণ, বেশির ভাগ উন্নত দেশেই স্থায়ী কর্মীর বদলে আউটসোর্সের মাধ্যমে কাজ করানোর বিষয়টি বর্তমানে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
কারণ, আউটসোর্স করলে প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা খরচ কম হয়, এ জন্য উন্নত বিশ্বের অনেক প্রতিষ্ঠানই বর্তমানে তাদের কাজের কিছু অংশ নিয়মিত আউটসোর্স করে। ফলে অনলাইন মার্কেটপ্লেসে কাজের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সারদের চাহিদাও বাড়ছে। এছাড়া ফ্রীলান্সাররা ও অনেক প্রতিষ্ঠানের সাথে ও অনেক প্রজেক্ট এ কাজ করার সুযোগ পাচ্ছে ।
ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস
বর্তমানে জনপ্রিয় ফ্রীল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস গুলো হল আপওয়ার্ক, ফাইবার, পিপল পার আওয়ার, ফ্রিল্যান্সার.com একেকটা মার্কেটপ্লেসের কাজের ধরন এবং হায়ারিং সিস্টেম আলাদা।
যেমন আপওয়ার্ক মার্কেটপ্লেসে ক্লায়েন্টরা হায়ার করার জন্য তার রিকোয়ারমেন্ট গুলো জব পোস্ট আকারে পোস্ট করে এবং যে সমস্ত ফ্রিল্যান্সাররা মনে করে তারা এ কাজগুলো করতে পারবে তারা প্রপোজাল পাঠায়। অনেক ফ্রিল্যান্সারদের মধ্যে ক্লায়েন্ট রা সব ফ্রিল্যান্সারদের প্রোফাইল যাচাই-বাছাই করে ইন্টারভিউর জন্য বাছাইকৃত ফ্রিল্যান্সারদের মেসেজ করে, তাদের মধ্যে যে কোন একজন জব টা win করে।
কাজ শেষ হওয়ার পর কাজটি ডেলিভারি করলে ক্লায়েন্ট যদি কাজটি পছন্দ করে তাহলে ক্লায়েন্ট জবটি একসেপ্ট করে নেয় এবং ফ্রিল্যান্সাররা পেমেন্ট পেয়ে যায়। পিপল পার আওয়ার, ফ্রিল্যান্সার.com এই দুটো মার্কেটপ্লেসের হায়ারিং সিস্টেম অনেকটা আপওয়ার্ক এর মতই।
ফাইবার মার্কেটপ্লেস এ ফ্রিল্যান্সাররা যা যা কাজ পারে তা GIG আকারে শোকেস করে রাখে, ক্লায়েন্টদের যখন একটি সার্ভিস প্রয়োজন হয় তখন সেই সার্ভিসটি লিখে সার্চ করলে ফ্রিল্যান্সারদের গুলো স্যার যে আসে তার মধ্যে যে কোন এক বা একাধিক ফ্রিল্যান্সারকে ক্লায়েন্ট নক করে, এবং যার সাথে কমিউনিকেশন করে ভালো লাগে তাকে অর্ডার করে,
কাজ শেষে অর্ডার ডেলিভারি করলে ক্লায়েন্টের কাজ টি পছন্দ হলে অর্ডারটি এক্সেপ্ট করে নেয় এবং ফ্রিল্যান্সাররা পেমেন্ট পেয়ে যায় । সুতরাং ফাইবার মার্কেটপ্লেস এ জবে এপ্লাই করার ঝামেলা নেই। তবে তাদের সার্ভিসগুলোর করার একটা মেজর ফ্যাক্টর থাকে এখানে ।
অনলাইন মার্কেটপ্লেসে কাজ পাওয়া যায় যেভাবে
অনলাইন মার্কেটপ্লেসে কাজের পরিমাণ বৃদ্ধির পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সারের সংখ্যাও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে একই কাজের জন্য কয়েক’শ ফ্রিল্যান্সার নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা করছেন। ফলে চাইলেই ইচ্ছেমতো কাজ পাওয়া যায় না অনলাইন মার্কেটপ্লেসে। ক্লায়েন্টরাও চায় কম খরচে দক্ষ ব্যক্তির মাধ্যমে কাজ করিয়ে নিতে।
ফলে অনলাইন মার্কেটপ্লেসে কাজ পেতে হলে নিজেকে নির্দিষ্ট বিষয়ে দক্ষ করার পাশাপাশি নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরতে হবে। ক্লায়েন্টের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগের পাশাপাশি কাজ নির্দিষ্ট সময়ে জমা দিতে হবে আপনাকে। মনে রাখতে হবে, কাজের মান খারাপ হলে ক্লায়েন্ট আপনাকে খারাপ রিভিউ দেবে, যা দেখে অন্য ক্লায়েন্টরা আপনাকে আর কোনো কাজ দেবে না। কারণ ক্লায়েন্টরা কাজ দিবে আপনার প্রোফাইল এর পূর্ববর্তী ক্লায়েন্টদের রিভিউ দেখে।
অনলাইন মার্কেটপ্লেসে কাজ পেতে হলে নিচের পদক্ষেপগুলো মানতে হবে যদি কেউ এই পদক্ষেপ গুলো মেনে চলতে পারে তাহলে সে অবশ্যই অনলাইন মার্কেটপ্লেসে কাজ পাবে।
আত্মবিশ্বাসী হতে হবে এবং টার্গেট ফিক্স করতে হবে
আপনাকে অবশ্যই আত্মবিশ্বাসী হতে হবে। কারণ আপনি গতানুগতিক জব ছেড়ে অনলাইনে ক্যারিয়ার গড়তে যাচ্ছেন। আপনাকে অনেক বাধার সম্মুখীন হতে হবে। স্কিল ডেভলপমেন্ট করার আগে আপনার যে বিষয়ে ভালো লাগা কাজ করে অবশ্যই সেই বিষয়ে স্কিল ডেভেলপ করতে হবে । কোনো কাজ নেওয়ার সময় অবশ্যই ভেবে দেখতে হবে আপনি কাজটি নির্দিষ্ট সময়ে ভালোভাবে শেষ করতে পারবেন কি না। এ জন্য অনলাইন মার্কেটপ্লেসে নিজের দক্ষতা ভালোভাবে উপস্থাপন করতে হবে। ক্লায়েন্টকে জানাতে হবে যে আপনি তার কাজের জন্য উপযুক্ত।
ফ্রিল্যান্স প্রোফাইল তৈরি করা
সুন্দর একটি প্রোফাইল তৈরি করে নিজেকে অনলাইন মার্কেটপ্লেসে উপস্থাপন করতে পারলে কাজ পাওয়া সহজ হয়ে যায়। অধিকাংশ ফ্রিল্যান্সাররা ভাবেন যে, কাজের দক্ষতা অর্জনের পরেই কেবল প্রোফাইল তরি করা যায়। এটা একটি ভুল ধারণা। সুন্দর প্রোফাইল আগে তৈরি করা যেতে পারে তবে একজন ফ্রিল্যান্সারের দক্ষতা অর্জন করার আগে কাজে বিড করা উচিত নয়। এজন্য আগে ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইট থেকে কাজ সম্পর্কে ভালো ধারণা নিতে হবে।
যাঁরা নতুন তাঁদের অনেকের প্রশ্ন থাকে কোথায়, কীভাবে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করব? এ প্রশ্নের সহজ উত্তর হচ্ছে কাজ শুরুর আগে ফ্রিল্যান্সিং সাইটগুলোতে কী ধরনের কাজ হয় তা পর্যবেক্ষণ করা। অ্যাকাউন্ট খোলা, সুন্দর প্রোফাইল তৈরি করা। নিজের কাজের স্যাম্পল তৈরি করা। পরীক্ষা দিয়ে নিজের দক্ষতা যাচাই করা।
কাজের জন্য ইল্যান্স, ওডেস্ক, ফ্রিল্যান্সারের মতো পরিচিত সাইটগুলোতে অ্যাকাউন্ট তৈরি করে আগে প্রাথমিক জ্ঞান অর্জন করুন পাশাপাশি আপনার দক্ষতার কাজগুলোকে সাইটের কাজের বর্ণনার সঙ্গে মিলিয়ে অনুশীলন করুন। দক্ষতা না থাকলে শুরুতেই কাজ পাওয়ার জন্য বিড করবেন না। কাজে দক্ষ হয়ে তবে বিড করুন।
ফ্রিল্যান্সিং কাজের জন্য এখন কয়েকটি বিষয় খুব জরুরি। সাবলীল ইংরেজি বলা, লেখা ও ইংরেজি বোঝা। আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলো সম্পর্কে জ্ঞান থাকাও দরকার। স্কাইপ ব্যবহার জানতে হবে। দ্রুতগতির ইন্টারনেট থাকা সবার আগে দরকার।
ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস সম্পর্কে ধারণা নেওয়া
নতুন অবস্থায় একজন ফ্রিল্যান্সারের মার্কেটপ্লেস সম্পর্কে ধারণা একেবারে না থাকতে পারে। তবে সঠিকভাবে কাজ করার ক্ষেত্রে এ সম্পর্কে পূর্ণ ধারণা থাকা প্রয়োজন। মার্কেটপ্লেসের হেল্প সেন্টার, গুগোল ব্লগ, সোশ্যাল মিডিয়া গ্রুপ গুলোতে অ্যাক্টিভ থেকে আমরা মার্কেটপ্লেস সম্পর্কে জানতে পারি, এছাড়াও বিভিন্ন ভালো ফ্রিল্যান্সারদের প্রোফাইল ভিজিট করে মার্কেটপ্লেসের একাউন্ট কিভাবে সাজাতে হয় তা জানতে পারি, এছাড়া এক্সপার্ট কারো গাইডলাইন নিয়েও মার্কেটপ্লেসের সম্পর্কে সঠিক ধারণা নেওয়া যায়।
ইংরেজি ভাষা ভালোভাবে জানতে হবে
মার্কেটপ্লেসে ক্লায়েন্টের কাজ নেওয়ার জন্য ইংলিশে কমিউনিকেশন করা অবশ্যই জরুরি একটা বিষয়, মার্কেটপ্লেসের ৭০% ক্লায়েন্ট এর ক্ষেত্রে চ্যাটিংয়ের মাধ্যমে কমিউনিকেশন করতে হয় এবং ৩০% ক্লায়েন্টের সাথে ভিডিও কলে এসে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ দিয়ে কাজ পেতে হয়।
ক্লায়েন্টদের সঙ্গে কথা বলা এবং কাজ বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য আপনাকে অবশ্যই ইংরেজিতে দক্ষ হতে হবে। Cambly, Hello Talk, Hello English, Engvarta, Josh Talk এই app গুলোতে signup করে সহজেই যেকারো সাথে অনলাইন এ app এর মাধ্যমে ইংলিশ এ কথা বলে ইংলিশ স্পিকিং ফ্লুয়েন্ট করা যেতে পারে।
নিজের পূর্ববর্তী কাজের পোর্টফোলিও তৈরি করা এবং পোর্টফোলিও সাজান
এখন মার্কেটপ্লেসে কাজ পাওয়ার জন্য প্রথমেই ক্লায়েন্টরা জিজ্ঞাসা করেন আগের কোন অভিজ্ঞতা আছে কিনা এবং পোর্টফলিও আছে কিনা। এক্ষেত্রে নিজের করা ক্লায়েন্টের কিছু কাজের পোর্টফোলিও অবশ্যই সাজিয়ে রাখতে হবে।
মার্কেটপ্লেসগুলোর প্রোফাইলে, এছাড়াও Behance, Dribbble এফ পোর্টফোলিও গুলো আমরা সুন্দরভাবে সাজিয়ে রাখতে পারি যা পরবর্তীতে ক্লায়েন্টকে দেখানো যেতে পারে। একজন নতুন ফ্রিল্যান্সার এর উচিত যত বেশি পোর্টফোলিও সংযোগ করা।
ওয়েব ডেভেলপার তাঁর ডেভেলপ করা সাইটের স্ক্রিন-শট নিয়ে আপলোড করতে পারেন, এবং গ্রাফিকস ডিজাইনার তাঁর ডিজাইন তৈরি করে প্রোফাইলে যুক্ত করে দেখাতে পারেন। সর্বোপরি কোন প্রোফাইলের পোর্টফোলিও একজন ফ্রিল্যান্সার যে বিষয়ে দক্ষ সে বিষয়ে তার পরিপূর্ণ দক্ষতা আছে সেটা প্রমাণ করে।
সমস্যা সমাধানের কৌশল জানা(গুগোল/ ইউটিউব/ ব্লগ/ CHATGPT)
মার্কেটপ্লেস ছাড়া ক্লায়েন্টের বিভিন্ন প্রজেক্টে কাজ করার সময় বিভিন্ন ধরনের সমস্যায় পড়তে হয়, এই সমস্যা গুলোর সমাধান জানতে অনলাইনে দ্রুত এবং সঠিকভাবে তথ্য খোঁজার কৌশল জানতে হবে। কারণ, ফ্রিল্যান্স কাজ করতে গেলে মাঝেমধ্যেই বেশ কিছু সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়, যা ইন্টারনেট থেকে তথ্য সংগ্রহ করে সমাধান করা সম্ভব।
আর এখন তো ChatGPT দিয়ে সহজেই যেকোনো কিছুর স্পেসিফিক আনসার জানা সম্ভব। অনেক অজানা প্রব্লেম এর সল্যুশন জানার জন্য CHATGPT অনন্য।
নিজের প্রচারণা চালানো/ মার্কেটিং
মার্কেটপ্লেসে কাজ পাওয়ার জন্য নিজের প্রচারণা বা মার্কেটিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়, যেহেতু আমরা অনলাইন প্লাটফর্ম এ কাজ করব সেহেতু সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম গুলো আমাদের মার্কেটিং এর জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে আমরা linkedin, facebook, instagram, behance, pinterest সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম গুলো নিজের কাজের মার্কেটিংয়ের জন্য ব্যবহার করতে পারি।
এছাড়াও অন্যান্য ফ্রিল্যান্সারদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ প্রয়োজন। এতে তাদের মাধ্যমে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কাজ পাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে।
শেষ কথাঃ
উপরোক্ত পদক্ষেপ গুলো যদি আমরা সঠিকভাবে পালন করতে পারি তাহলে আমরা অবশ্যই অনলাইন মার্কেটপ্লেসে কাজ পাব । তবে যেকোনো মার্কেটপ্লেসে সফল হতে ধৈর্য ধরতে হবে এবং অনেক সময় দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হতে পারে কন্টিনিউয়াস কাজ পাওয়ার জন্য।