তিন সপ্তাহ বন্ধ থাকার পর খুলে দেওয়া হলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক। আজ বৃহস্পতিবার দুপুর দেড়টার দিকে মাধ্যমটি খুলে দেওয়া হয়।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বলেছেন, ফেসবুক খোলার
সরকারি নির্দেশনা এসেছে। তাই ফেসবুক খুলে দেওয়া হয়েছে। তবে ভাইবার,
হোয়াটঅ্যাপসসহ অন্য অ্যাপসগুলো পরবর্তী নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত বন্ধ
থাকবে।
সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় তারানা হালিম তরুণ প্রজন্মকে
ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, তরুণ প্রজন্মকে অনেক ধন্যবাদ, দেশের স্বার্থে,
নিরাপত্তার স্বার্থে ফেসবুক বন্ধ থাকা শর্তেও তারা ধৈর্য ধরে অপেক্ষা
করেছেন।
গত ১৮ নভেম্বর দুপুরে বাংলাদেশে বন্ধ করে দেওয়া হয় ফেসবুক, ভাইবার,
হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জারের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও অ্যাপ্লিকেশনগুলো
(অ্যাপস)। সেদিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল জানান,
নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা থাকায় এসব সাময়িকভাবে বন্ধ করা হয়েছে।
ওই দিন সকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের
চৌধুরী ও জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল
রেখে রায় দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। রায় ঘোষণার পর পরই দেশে সামাজিক
যোগাযোগের মাধ্যমগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ ছাড়া প্রায় সোয়া ঘণ্টা বন্ধ
থাকে সারা দেশের ইন্টারনেট সংযোগও।
গত ৩ ডিসেম্বর ফেসবুকসহ বন্ধ থাকা অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম খুলে
দেওয়ার দাবিতে রাস্তায় নামেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের
শিক্ষার্থীবৃন্দ’র ব্যানারে মানববন্ধন করে জনগণের মতপ্রকাশের
স্বাধীনতাবিরোধী সব আইন বাতিল করার দাবি জানান।
ফেসবুক খুলে দেওয়ার দাবিতে ৪ ডিসেম্বর রাস্তায় নামেন লেখক, শিল্পী,
সংস্কৃতিকর্মী, অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট ও অনলাইন ব্যবসায়ীরা। তারা রাজধানীর
শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে অবস্থান ধর্মঘট পালন করে। এতে নানা
শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেয়। পরের দিন একই স্থানে মানববন্ধন করে ই-কমার্স
ব্যবসায়ীরা।
৬ ডিসেম্বর সচিবালয়ে ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেন
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, ডাক ও টেলিযোগাযোগ
প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ
আহমেদ পলক।
বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘বৈঠকে আমরা ফেসবুক
কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমাদের দেশের নিরাপত্তাসংক্রান্ত কিছু বিষয় তুলে ধরেছি,
যেগুলো আমাদের কাছে হুমকিস্বরূপ মনে হয়েছে। আমরা তাদের বিষয়গুলো বোঝাতে
সক্ষম হয়েছি। তারা বিষয়গুলো নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে।’
‘আমি বলব, আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে। ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যে আলোচনা
হয়েছে সেগুলো নিয়ে এখন আমরা নিজেরা আলোচনায় বসব। তার পরই ফেসবুক খুলে
দেওয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেব’, বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
এর আগে গত ৩০ নভেম্বর তারানা হালিম ফেসবুক কর্তৃপক্ষের কাছে এর
অপব্যবহার নিয়ে একটি ইমেইল পাঠান। এর পরের দিনই ফেসবুক কর্তৃপক্ষ বৈঠকে
বসার আহ্বানে সাড়া দিয়ে ইমেইল পাঠায়।
ইমেইলে বাংলাদেশে ফেসবুকের ব্যবহারকারী তিন কোটি। এর সুনাম রক্ষায়
ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠকে বসার ব্যাপারে বিবেচনা করা উচিত বলে উল্লেখ
করা হয়।
ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ করার প্রতিবাদে ৭ ডিসেম্বর
‘নির্বাক অবস্থান কর্মসূচি পালন করে সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ
শিক্ষার্থীরা। একই দিন সন্ধ্যায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এনটিভি অনলাইনকে বলেন,
যথা শিগগিরই ফেসবুক খুলে দেওয়া হবে। এজন্য সবাইকে ‘একটু ধৈর্য’ ধরার আহ্বান
জানান তিনি।