দেশের মানুষের জীবনরক্ষার চেষ্টা করার জন্য আমি ক্ষমা প্রার্থী
লেখাটি
আমি “প্রতিমন্ত্রীর জায়গা থেকে লিখছি না”, লিখছি এ দেশের একজন সাধারণ
নাগরিক হিসেবে- যে দেশকে ও দেশের মানুষকে ভালোবাসে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম
ব্যবহার করেই কিন্তুু- চাঁদে কারো মুখ দেখার গুজবে প্রাণ হারিয়েছে বহু
মানুষ, আবার একটি পোস্টের কারণে (সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে) বৌদ্ধ্য বিহারে
চলেছে হামলা- আমরা সব ভুলে গেছি। ভুলে গেছি বহু দেশ আজকের দিন পর্যন্ত
সেদেশগুলোর মানুষের নিরাপত্তার জন্য “ইন্টারনেট” পর্যন্তও সাময়িক বন্ধ
রেখেছে। সেদেশের নাগরিকেরা দেশের বৃহত্তর স্বার্থে তা মেনে নিয়েছে, “টু”
শব্দটি করেননি। হয়তো তারা ভাবছেন- “সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো দুর্ঘটনা
ঘটার আগে “ সাময়িক বন্ধ ” রাখলে এই মানুষগুলোর জীবন ( FRANCE এর)
বাঁচানো যেত কি?” আরেকটি ঘটনা বলি, পুলিৎজার পুরস্কার পাওয়া এক চিত্রগ্রাহক
একটি ছবি তুললেন ক্ষুধার্ত এক শিশু এবং তার মুখোমুখি একটি শকুনের। ছবি
হিসাবে অসাধারণ। তার সামনে ২টি বিকল্প ছিল- হয় তিনি ছবিটি তুলবেন, নয়তো
শিশুটিকে দ্রুত তুলে নিয়ে নিকটবর্তী হাসপাতালে যাবেন। তার কাছে প্রথম
বিকল্পটি আকর্ষণীয় মনে হলো। তিনি তুললেন অসাধারণ ছবিটি।
কিন্তুু কয়েক
সেকেন্ডের মধ্যে শিশুটি মারা গেল। চিত্র গ্রাহক পেলেন “ পুলিৎজার
পুরস্কার ”। কর্মের এক বিরল স্বীকৃতি। কিন্তুু বিবেক তাকে তাড়া করলো
সর্বক্ষণ- “যদি তখন ছবি না তুলে শিশুটিকে তিনি নিয়ে যেতেন নিকটবর্তী
অস্থায়ী চিকিৎসাকেন্দ্রে, অন্তত বাঁচাবার চেষ্টা তো করতে পারতেন! ”
অনুশোচনায় আত্মহত্যা করলেন তিনি। আমরা
বড় বেশি কঠিন, কঠোর হয়ে গেছি- তাই মানুষের জীবন বাঁচানোর চেষ্টাকে কাঠগড়ায়
দাঁড়াতে হয়। ধন্যবাদ সকলকে যারা মানুষের জীবন বাঁচানোর প্রচেষ্টাকে ব্যঙ্গ
করেন, তিরস্কার করেন। এ জন্যই হয়ত মানুষের জায়গায় আসছে রোবট। রোবট হবার পথ
থেকে খুব দূরে কি আমরা? এবার একজন জনপ্রতিনিধির জায়গা থেকে লিখি-
যার অনুরোধ পুরো লেখাটি ছাপাবার, খণ্ডিত আকারে নয়। বহুবার এই অনুরোধ করেছি,
ফল পাইনি- খণ্ডিত সংবাদ বিভ্রান্তি ছড়ায়- এটুকু যেন ভুলে না যাই।
প্রথমত:
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম অস্থায়ীভাবে, সাময়িক সময়ের জন্য জননিরাপত্তার
স্বার্থে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে, সরকারের জনজীবনের
নিরাপত্তারক্ষার দায়িত্বের অংশ হিসাবে (আবারো উল্লেখ করছি) সাময়িকভাবে
স্থগিত রাখা হয়েছে।
দ্বিতীয়ত, লক্ষ্য করবেন এবার শীর্ষ দুই
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায়ের আগে বা পরে দেশে বড় ধরনের কোনো নাশকতা ঘটেনি।
ধর্মযাজকের উপর হামলাকারী গ্রেপ্তার হয়েছেন। বিশিষ্টজনদের প্রাণনাশের
হুমকিদাতাও গ্রেপ্তার হয়েছেন । স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করলে জানতে
পারবেন নাশকতার জন্য কতজন পরিকল্পনাকারীদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সাময়িক
বন্ধ রাখার জন্য এবার গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়েছে।
তৃতীয়ত, না,
“মাথাব্যথার জন্য আমরা মাথা কেটে ফেলিনি” – কারণ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
থেকে সবুজ সংকেত ও সরকারের নির্দেশনা পেলেই এসব মাধ্যম খুলে দেয়া হবে।
সরকারের দায়িত্ব জনগণের নিরাপত্তা বিধান করা। যদি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম
খুলে দেবার জন্য একটি প্রাণহানিও ঘটে তখন কিন্তুু জনগণ সরকারকেই দোষারোপ
করেন, করবেন। তাহলে জননিরাপত্তার স্বার্থে সরকার সাময়িক সহযোগিতা চাইলে তা
দিতে আমরা কুণ্ঠিত হব কেন ?
চতুর্থত, বিকল্প ব্যবস্থা কি নেয়া যেত
না? আমি দায়িত্ব গ্রহণ করেছি প্রতিমন্ত্রী হিসেবে প্রায় সাড়ে চার মাস। এর
মধ্যে সিম/রিম নিবন্ধন, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের কার্যক্রম জোরদার করা,
ব্যান্ডইউথের দাম কমানো, টেলিটককে সক্ষম করা, বায়োমেট্রিকস চালু করা, ডাক
বিভাগের জন্য E-Cash transfer সম্প্রসারণ ও ১১৮টি যানবাহন ক্রয় প্রক্রিয়া,
MNP চালুর জন্য প্রক্রিয়া শুরুসহ দায়িত্ব পাবার ৩ দিনের মাথায় “প্রযুক্তি
দিয়ে প্রযুক্তিকে মোকাবিলা” করার জন্যও কাজ শুরু করেছি।
প্রযুক্তি
দিয়ে প্রযুক্তি মোকাবেলার জন্য আমি প্রতিমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব নেবার পর
-ইন্টারনেট সেফটি সলিউশন আমদানি করার প্রক্রিয়া শুরু করেছি যার মাধ্যমে
দেশের বাইরের আপত্তিকর কনটেন্ট ফিল্টার্ড হয়ে দেশে প্রবেশ করবে, জনগণের ও
নারীদের নিরাপত্তা বাড়বে।
11G দের DPI এর Capacity যাচাই করার এবং
৭দিনের মধ্যে উক্ত 11G দের তা জানিয়ে উপযুক্ত Capacity র DPI ও বসাবার জন্য
(লাইসেন্সের শর্ত মোতাবেক)- নির্দেশনা দিয়েছি- ISP দের Database তৈরি,
লাইসেন্স প্রাপ্তদের Database তৈরি সহ, যারা যত্রতত্র ইন্টারনেট সার্ভিস
দিচ্ছেন তাদের বৈধভাবে শর্তপূরণ সাপেক্ষে লাইসেন্স নিয়ে সম্পূর্ণ Database
তৈরি করা এবং সকল ISP রা কাদের সংযোগ দিচ্ছেন তার তালিকা তৈরি করার জন্য
BTRC কে নির্দেশনা দিয়েছি।
এই কাজগুলো কিন্তু চলছে। ৩ মাস খুব বেশি সময় নয়, অচিরেই এর ফল পাবেন।
যারা
জনস্বার্থে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার বন্ধ রেখে সাময়িক অসুবিধা মেনে
নিয়ে নাশকতাকারীদের খুঁজে বের করতে, নাগরিকের জীবন বাঁচাতে সরকারকে
সহযোগিতা করেছেন তাদের এই দেশপ্রেমের জন্য অকুণ্ঠ সাধুবাদ ও কৃতজ্ঞতা
জানাই, যারা ভিন্ন পথে এসব মাধ্যম ব্যবহার করে তাদের নিজেদের ID হ্যাক হতে
পারে- এই সতর্কতাও দেয়া প্রয়োজন। যারা আমাকে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ ও
তিরস্কার করেছেন তাদের কাছে ব্যক্তি আমি জীবন বাঁচাবার চেষ্টা করার জন্য,
রাষ্ট্রের একজন জনপ্রতিনিধি হিসাবে জননিরাপত্তা বিধানে ভূমিকা পালনে
গর্বিত হয়েও ক্ষমাপ্রার্থী।
সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক আমাদের সকলের
দায়িত্ব জননিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এই কাজটি সততার ও নিষ্ঠার সাথে করার জন্য
যারা আমাকে প্রবল তিরস্কার করেছেন তা আমি নতমস্তকে গ্রহণ করলাম কারণ হয়তো এ
কারণে আজ কোথাও এক মায়ের সন্তান হাসিমুখে তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে- অক্ষত। এ
প্রাপ্তিটুকুও আমার জন্য কম নয়। কম নয় কারও জন্যই।
লেখক : তারানা হালিম (এমপি), প্রতিমন্ত্রী ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ