ঘরে বসে দ্রুত ওজন কমানোর টিপস | Quick weight loss tips at home.


আসসালামুওয়ালাইকুম, শুরু করছি মহান আল্লাহ তা আলার নামে আশা করছি সবাই ভালো আছেন । অনেকে ওজন কমানোর জন্য অনেক দিন থকে চেষ্টা করে যাচ্ছেন কিন্তু কিছুতেই ওজন কমাতে পারছেন না তাদের জন্য আজকের এই পোস্ট। আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় ঘরে বসে দ্রুত ওজন কমানোর টিপস। অল্প সময়ে ওজন কমানোর জন্য প্রয়োজন ধৈর্য ও নিয়মাফিক চলাফেরা আর সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন শারীরিক কসরত । এক সপ্তাহে কয়েক কেজি ওজন  কমানোর জন্য আপনাকে আপনার ডায়েটে অর্থাৎ খাবারে কিছু বড় পরিবর্তন আনতে হবে এবং নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। অল্প সময়ে ওজন কমাতে ঘরে বসেই নিচের পদ্ধতিগুলো ব্যবহার করলে ফল পাবেন। 

প্রতিদিনের জন্য একটি ব্যায়াম পরিকল্পনা তৈরি করুনঃ 

আপনাকে মনে রাখতে হবে দ্রুত ওজন কমানোর উপায় খুবই কষ্টসাধ্য কাজ। শুধুমাত্র ডায়েটিং আপনাকে ওজন কমাতে সাহায্য করবে না। এর সাথে একটি ভালো ব্যায়াম পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে যা আপনি ৭ দিন ধরে রাখতে পারবেন। ব্যায়াম এর জন্য একটি সময়সূচী তৈরি করুন এবং অবশ্যই আগামী সাত দিন যেন এই ব্যায়াম করতে পারেন সেইভাবে নিজেকে সবসময় তৈরি রাখতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, আপনি যখন হাঁটবেন, পাঁচ মিনিটের জন্য দৌড়ান এবং তারপর আবার হাঁটাতে থাকুন । এটি বেশি ক্যালোরি পোড়ায়। জুম্বা, অ্যারোবিকস এবং সাঁতার দ্রুত ওজন কমানোর জন্য খুব ভালো ব্যায়াম।

প্রতিদিনের একটি খাবার পরিকল্পনা তৈরি করুনঃ 

প্রতিদিনের জন্য একটি খাবার পরিকল্পনা তৈরি করুন। সকালের খাবার, দুপুরের খাবার এবং রাতের খাবারের জন্য চর্বিযুক্ত খাবার বাদ দিয়ে নির্দিষ্ট কিছু খাবার পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। আপনি সারাদিনে যে খাবারগুলি খান তা নোট করার জন্য একটি ডায়েরি রাখতে পারেন। এটি আপনাকে সেই খাবার বা অভ্যাসগুলি সনাক্ত করতে সাহায্য করতে পারে যা আপনার ওজন বৃদ্ধি করতে পারে । নিচে জিএম ডায়েট চার্ট নামে একটি বহুল পরিক্ষীত খাবার পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে ।

খাদ্যাভাস পরিবর্তন

আপনার লক্ষ্য যদি মাসে ৭ কেজি ওজন কমানো হয়ে থাকে তাহলে প্রথমে আপনাকে খাদ্যাভাসে ব্যাপক পরিবর্তন আনতে হবে। আপনার খাদ্যাভাসে যেন নিয়ম মেনে প্রতিদিন একই সময়ে খেতে হয় সে বিষয়ে বিশেষ খেয়াল রাখবেন। সকালবেলা ভারী নাস্তা দুপুরে ভাত এবং রাতে রুটি বা হালকা খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন। মাঝখানের সময়টুকু ফলমূল খেতে পারেন এ খাদ্যাভাস আপনাকে ওজন কমাতে অবশ্যই সাহায্য করবে।

সুষম খাবার গ্রহণ

ওজন কমানোর অন্যতম প্রধান উপায় হচ্ছে আপনাকে অবশ্যই সুষম খাবার খেতে হবে। আপনার খাদ্য তালিকায় অবশ্যই বেশি পরিমাণে ফলমূল শাকসবজি ইত্যাদি খাওয়ার চেষ্টা করুন। চর্বি অথবা চর্বিজাতীয় খাবার পুরোপুরি খাওয়া বাদ দিতে হবে। বাইরের তেলে ভাজা খাবার খাদ্য তালিকা থেকে একেবারে বাদ দিন এবং ফাস্টফুড জাতীয় খাবার যথাসম্ভব কম খাওয়ার চেষ্টা করুন। দুই বেলার মধ্যবর্তী সময়ে যদি ক্ষুধা লেগে থাকে তাহলে পপকর্ন ফল বা ফলের জুস খেতে পারেন।

অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা পরিহার করুন

মানসিক টেনশন আপনার ওজন বাড়াতে সাহায্য করে এই ব্যাপারটি আমাদের সকলের কাছে অবাক করার মতো হলেও আপনাদের জন্য বলতে চাই যে অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা আপনার ওজন বাড়তে সাহায্য করে। কারণ অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা ফলে মানুষ বেশি খেয়ে থাকে ফলে মোটা হওয়ার প্রবণতা একটু বৃদ্ধি পায়। সুতরাং নিজেকে ফিট রাখতে হলে অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা সম্পূর্ণভাবে পরিহার করুন।

পর্যাপ্ত বিশ্রাম 

একজন সুস্থ মানুষ দিনে কমপক্ষে ছয় থেকে আট ঘণ্টা ঘুমানোর প্রয়োজন তবে এর বেশি ঘুমালে আপনার ওজন বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। সুতরাং ওজন বেড়ে যাওয়া থেকে বাঁচার জন্য হলেও আপনার পর্যাপ্ত ঘুম প্রয়োজন। এক্ষেত্রে আপনি দিনের বেলায় ঘুমানোর যে অভ্যাস রয়েছে সেই অভ্যাসটা দূর করতে পারেন। মনে রাখবেন অতিরিক্ত ঘুম আপনার শরীরের জন্য ক্ষতিকর তাই নিয়ম মেনে রাতে জলদি ঘুমানোর চেষ্টা করুন এবং ভোরবেলা উঠে পড়ুন।

ব্যায়াম

দ্রুত ওজন কমানোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ যে কয়েকটি উপায় রয়েছে তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করা হচ্ছে ব্যায়াম। আপনি যদি প্রতিদিন ভোর বেলায় ঘুম থেকে উঠে শারীরিক কসরত করেন তাহলে আপনার শরীরকে ফিট রাখতে তাব সাহায্য করবে। আপনি যদি নিয়মিত ব্যায়াম করতে চান তাহলে দেখবেন যে আপনার শরীরে যে অতিরিক্ত চর্বি রয়েছে তা ঘাম আকারে বের হয়ে যাবেন। তাই আপনি যদি এক মাসের মধ্যে আপনার ওজন কমাতে চান তাহলে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা করে ব্যায়াম করতে পারেন।

এক্ষেত্রে আপনি প্রতিদিন ভোর বেলা দৌড়ানো হাঁটাহাঁটি ইত্যাদি কাজগুলো করতে পারেন এর পাশাপাশি চাইলে আপনি জিমনেসিয়ামে ভর্তি হয়ে নিয়মিত জিম করতে পারেন। ওজন কমানোর জন্য সাঁতার কাটা ও সাইকেল চালানো আদর্শ ব্যায়াম। ওজন কমানোর জন্য আপনাকে ব্যায়াম করার জন্য হলেও ঘরের বাইরে জিমনেশিয়াম বা পার্কে যেতে হবে এমন কোনো প্রয়োজন নেই। আপনি ঘরের দৈনন্দিন কাজের মধ্যে নিজের ব্যায়াম সেরে নিতে পারবেন।

রাতে তাড়াতাড়ি খাবার চেষ্টা করুন

ঘুমাতে যাওয়ার কমপক্ষে এক থেকে দেড় ঘণ্টা আগে রাতের খাবার শেষ করুন এবং চেষ্টা করুন আটটার মধ্যে রাতের খাবার শেষ করে দেওয়ার। আপনি যদি রাতের খাবার শেষ করার পর সঙ্গে সঙ্গে ঘুমিয়ে যান তাহলে আপনার ওজন বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সুতরাং যত তাড়াতাড়ি পারেন রাতের খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন এবং খাবার দুই ঘণ্টার মধ্যেই ঘুমানোর চেষ্টা করতে পারেন। আপনি চাইলে রাতে ঘুমানোর আগে খিদে লাগলে ফলের জুস অথবা দুধ খেতে পারেন।

খাওয়ার আগে পানি খান

খাবার গ্রহণের ১০ থেকে ১৫ মিনিট আগে আপনি পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করতে পারেন আপনার হজমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। যথাসম্ভব বাড়িতে খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন এবং জাঙ্কফুড জাতীয় খাবার পুরোপুরি পরিহার করুন।

অতিরিক্ত খাবার পরিহার করুন

আপনার শরীরের জন্য যেটুকু খাবার প্রয়োজন ঠিক ওই পরিমাণ খাবার খান। নিজের শরীরের চাহিদার তুলনায় যখন অতিরিক্ত খাবার খাবেন তখন আপনার ওজন বৃদ্ধি পাবে। সুতরাং ওজন কমানোর ক্ষেত্রে আপনাকে পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবার খাওয়া বিশেষ জরুরী। তাই অতিরিক্ত কোন খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।

চিনি পরিহার করুন

কাঙ্খিত ওজন কমানোর জন্য আপনার খাদ্য তালিকা থেকে তিনি পুরোপুরি পরিহার করা আবশ্যক। এক জরিপে দেখা গিয়েছে মাত্র ১ চা চামচ চিনিতে ১৬% ক্যালোরি থাকে যা আপনাকে ওজন কমানোর সম্পূর্ণ অন্তরায়। সুতরাং চা এবং দুধ খাবার সময় চিনি পরিহার করার চেষ্টা করুন।

গ্রিন টি

গ্রীন টি তে রয়েছে এমন কিছু প্রাকৃতিক উপাদান যা আপনাকে ওজন কমাতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এক বগগানি গবেষণায় দেখা গেছে যে প্রতিদিন চার কাপ করে যদি কোন ব্যক্তি গ্রিন টি ১ সপ্তাহ খেয়ে থাকে তাহলে তার শরীর থেকে ৪০০ গ্রাম ক্যালোরি ক্ষয় করা সম্ভব। এটাই আমাদের দেহের ওজন ঠিক রাখতে সাহায্য করে ফলে প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় গ্রিন টি অবশ্যই রাখুন।

শেষ কথাঃ

আজকে আপনাদের সাথে ঘরে বসে দ্রুত ওজন কমানোর উপায় সম্পর্কে দীর্ঘ আলোচনা করলাম কষ্টকরে পুরোপোস্টটি পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ । আশা করছি উপরের পদ্ধতিগুলো ভালোভাবে মেনে চললে আপনি খুব তাড়াতাড়ি ওজন কমাতে পারবেন । কিন্তু একটি কথা মাথায় রাখবেন ওজন দ্রুত কমানোর চাইতে আস্তে আস্তে কমানো ভালো তাহলে শরীর দীর্ঘস্থায়ি ভাবে ফিট থাকবে । আপনার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করে আজকের মত এখানেই শেষ করছি ।  ধন্যবাদ

শেয়ার করুন
পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট