বিশ্বের প্রতিটি সৃষ্টি আল্লাহতায়ালার সাহায্যের মুখাপেক্ষি। এ বিশ্বাস অন্তরে স্থাপন ঈমানের অংশবিশেষ। জীবন চলার পথে নানা সময়ে মানুষ বিভিন্ন সমস্যায় পতিত হয়। কষ্ট পায়, অসুস্থ হয়। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য মানুষ যেন আল্লাহর মুখাপেক্ষি হয়ে তার সাহায্য কামনা করে সমস্যামুক্ত হয়- সে পথ বলে দিয়েছেন। কোন পথে, কীভাবে মানুষ আল্লাহর সাহায্য কামনা করবে, সেই উপায় ও পথও আল্লাহ বলে দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘ তোমরা নামাজ ও সবরের (ধৈর্য) মাধ্যমে আমার (আল্লাহর) সাহায্য কামনা করো। নিশ্চয়ই খোদাভীরু ছাড়া এটা অবশ্যই কঠিন কাজ।’ বর্ণিত আয়াতে আল্লাহতায়ালা মানুষকে দুনিয়া ও আখেরাতের যাবতীয় কল্যাণের জন্য সবর ও নামাজের মাধ্যমে তার কাছে সাহায্য প্রার্থনার নির্দেশ দিচ্ছেন। এই আয়াতাংশ আমাদের উত্তমরূপে অনুধাবন করা প্রয়োজন। এই আয়াতের ব্যাখ্যায় আল্লামা আবু বকর আল জাসসাস ‘আহকামুল কুরআন’ তাফসিরে লিখেছেন, এর অর্থ আল্লাহ যা ফরজ করেছেন, সেসব ফরজ কাজ অত্যন্ত ধৈর্য-সহকারে আদায় করতে থাকা। আর তার হুকুম অমান্য করা থেকে বিরত থাকা। আয়াতে নামাজের পাশাপাশি এসেছে সবরের কথা। পবিত্র কোরআনে সবর শব্দটির অর্থ ব্যাপক। হাদিসে এর ব্যবহার এসেছে ব্যাপক অর্থে। যেমন কোথাও এসেছে ধৈর্যধারণ অর্থে; যেমন হজরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিস। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে মুসলমান মানুষের সঙ্গে একাত্ম ও একত্র হয়ে বসবাস করে এবং তাদের সদ্ভাব ও যন্ত্রণায় ধৈর্যধারণ করে, সে ব্যক্তি ওই মানুষের চেয়ে উত্তম, যে অন্যের সঙ্গে মেলামেশা করে না....।’ কোথাও সবর এসেছে দৃঢ়তা অর্থে; যেমন হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘হে লোক সকল! তোমরা শত্রুর সঙ্গে যুদ্ধের আকাঙ্ক্ষা করো না, আল্লাহর কাছে নিরাপত্তার প্রার্থনা করো। কিন্তু যখন শত্রুর সম্মুখীন হও, তখন ধৈর্য ও দৃঢ়তা প্রকাশ করো। আসলে সবর এমন একটি শব্দ যা নির্দিষ্ট কোনো প্রতিশব্দে প্রকাশ করা বা বুঝানো কঠিন। এ শব্দটি যেসব ব্যঞ্জনাময় অর্থ প্রকাশ করে তার মধ্যে রয়েছে- ১. পরিপূর্ণতা বিধানের জন্য সহিষ্ণুতা, অধীর না হওয়া। ২. সহিষ্ণুতা, অধ্যাবসায়, দৃঢ় সংকল্প, স্থিরতা- উদ্দেশ্য সাধনে কঠিন হওয়া। ৩. আকস্মিক বা দৈব কার্যকরণের বিপরীতে সুবিন্যস্ত বা প্রণালীবদ্ধভাবে কার্য সম্পাদন করা। ৪. দুঃখ, পরাজিত বা ভোগান্তি অবস্থায় বিরক্ত ও বিদ্রোহী মনোভাবাপন্ন না হয়ে এসব অবস্থা স্বাভাবিকভাবে গ্রহণপূর্বক আল্লাহর ইচ্ছার কাছে আত্মসমর্প
Showing posts with label ইসলাম. Show all posts
Showing posts with label ইসলাম. Show all posts
এতিম ও বিধবার প্রতি ইসলাম।
ইসলামপূর্ব যুগে এতিম ও বিধবাদের কোনো অধিকার সমাজে প্রতিষ্ঠিত ছিল না। বাবা মারা যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অসহায় সন্তানদের প্রতি শুরু হতো অত্যাচার-অবিচার ও জুলুম-নিপীড়ন। তাদের অধিকার দেওয়া তো হতোই না, বরং এতিম শিশুদের জন্য বাবার রেখে যাওয়া সম্পদ কেড়ে নেওয়ার জন্য শুরু হতো ষড়যন্ত্র। অনুরূপভাবে স্বামী মারা যাওয়ার পর বিধবা স্ত্রী মানুষের কটু কথার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হতো। স্বামীহারা অসহায় নারী অপমান ও লাঞ্ছনার শিকার হয়ে জীবন-যাপন করত। এতিমদের অধিকার ও মর্যাদা পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন জায়গায় উল্লেখ হয়েছে। তাদের ধন-সম্পদ বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য জোর তাগিদ দেওয়া হয়েছে। তাদের অধিকার নিয়ে কেউ যেন অবহেলা না করে সে জন্য বার বার সতর্কবাণী উচ্চারিত হয়েছে। ইরশাদ হচ্ছে- ‘এতিমদের তাদের সম্পদ বুঝিয়ে দাও। খারাপ মালামালের সঙ্গে ভালো মালামালের অদলবদল করো না। আর তাদের ধন-সম্পদ নিজেদের ধন-সম্পদের সঙ্গে সংমিশ্রণ করে তা গ্রাস করো না। নিশ্চয় এটা বড়ই মন্দ কাজ।’ সূরা নিসা, আয়াত ২। এই আয়াতে এতিমদের তাদের সব ধরনের অধিকার ও পাওনা বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য আদেশ দেওয়া হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে এতিমদের সম্পদ নিজের সম্পদের সঙ্গে মিলিয়ে ভোগদখলের দুরভিসন্ধি করতে নিষেধ করা হয়েছে। অবশ্য যদি কোনো দায়িত্বশীল ব্যক্তি বা অভিভাবক এতিমদের উপকারের উদ্দেশ্যে নিজের মালামালের সঙ্গে এতিমদের মালামাল মিলায় তাহলে তা বৈধ। পবিত্র কোরআনের অন্য আয়াতে এতিমদের ধন-সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাসকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারিত হয়েছে। মহান আল্লাহ বলছেন, ‘যারা এতিমদের অর্থ-সম্পদ অন্যায়ভাবে খায়, তারা নিজেদের পেটে আগুনই ভর্তি করছে এবং সত্বরই তারা অগ্নিতে প্রবেশ করবে।’ সূরা নিসা, আয়াত ১০। বিখ্যাত হাদিস বিশারদ সাহাবি হজরত আবু হোরায়রা রা. বলেন, বিধবা ও অসহায়দের যারা অভিভাবক হবে এবং দায়-দায়িত্ব পালন করবে তাদের সম্পর্কে রসুল সা. বলেন, ‘বিধবা ও অসহায়দের তত্ত্বাবধানকারী ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় জেহাদকারীর মতো’ হাদিস বর্ণনাকারী সাহাবি বলেন, আমার ধারণা রসুল সা. এও বলেছেন যে, (বিধবা ও অসহায়দের তত্ত্বাবধানকারীর মর্যাদা) ওই ব্যক্তির মতো, যে অলসতা না করে সারারাত জেগে ইবাদত করে এবং ধারাবাহিকভাবে প্রতিদিন রোজা রাখে। বুখারি ও মুসলিম। হাদিসে ইরশাদ হচ্ছে- ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে কোনো এতিমের মাথায় হাত বুলাবে যেসব চুলের ওপর দিয়ে তার হাত অতিক্রম করবে এর প্রতিটির বিনিময়ে তার জন্য সোয়াব লেখা হবে। মুসনাদে আহমদ, তিরমিজি।
জেনে নিন কোরআনের ১১৪টি সূরার আরবি ও বাংলা নাম।
আমরা সবাই জানি কোরআনে ১১৪টি সূরা রয়েছে। কোরআনের ১১৪টি সূরার আরবি ও বাংলা নাম নিচে দিলাম দেখেন-
১. আল ফাতিহা (সূচনা)
২. আল বাকারা (বকনা-বাছুর)
৩. আল ইমরান (ইমরানের পরিবার)
৪. আন নিসা (নারী)
৫. আল মায়িদাহ (খাদ্য পরিবেশিত টেবিল)
৬. আল আনআম (গৃহপালিত পশু)
৭. আল আরাফ (উচু স্থানসমূহ),
৮. আল আনফাল (যুদ্ধে-লব্ধ ধনসম্পদ),
৯. আত তাওবাহ্ (অনুশোচনা),
১০. ইউনুস (নবী ইউনুস),
১১. হুদ (নবী হুদ),
১২. ইউসুফ (নবী ইউসুফ),
১৩. আর রা’দ (বজ্রপাত),
১৪. ইব্রাহীম (নবী ইব্রাহিম),
১৫. আল হিজর (পাথুরে পাহাড়),
১৬. আন নাহল (মৌমাছি),
১৭. বনী-ইসরাঈল (ইহুদী জাতি),
১৮. আল কাহফ (গুহা),
১৯. মারইয়াম (মারইয়াম (ঈসা নবীর মা))
২০. ত্বোয়া-হা (ত্বোয়া-হা),
২১. আল আম্বিয়া (নবীগণ),
২২. আল হাজ্জ্ব (হজ্জ),
২৩. আল মু’মিনূন (মুমিনগণ),
২৪. আন নূর (আলো),
২৫. আল ফুরকান (সত্য মিথ্যার পার্থক্য নির্ধারণকারী গ্রম্থ),
২৬. আশ শুআরা (কবিগণ),
২৭. আন নম্ল (পিপীলিকা),
২৮. আল কাসাস (কাহিনী),
২৯. আল আনকাবূত (মাকড়শা),
৩০. আর রুম (রোমান জাতি),
৩১. লোক্মান (একজন জ্ঞানী ব্যাক্তি),
৩২. আস সেজদাহ্ (সিজদা),
৩৩. আল আহ্যাব (জোট),
৩৪. সাবা (রানী সাবা/শেবা),
৩৫. ফাতির (আদি স্রষ্টা),
৩৬. ইয়াসীন (ইয়াসীন),
৩৭. আস ছাফ্ফাত (সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ানো),
৩৮. ছোয়াদ (আরবি বর্ণ),
৩৯. আয্-যুমার (দলবদ্ধ জনতা),
৪০. আল মু’মিন (বিশ্বাসী)
৪১. হা-মীম সেজদাহ্ (সুস্পষ্ট বিবরণ),
৪২. আশ্-শূরা (পরামর্শ),
৪৩. আয্-যুখরুফ (সোনাদানা),
৪৪. আদ-দোখান (ধোঁয়া),
৪৫. আল জাসিয়াহ (নতজানু),
৪৬. আল আহ্ক্বাফ (বালুর পাহাড়),
৪৭. মুহাম্মদ (নবী মুহাম্মদ),
৪৮. আল ফাত্হ (বিজয়, মক্কা বিজয়),
৪৯. আল হুজুরাত (বাসগৃহসমুহ),
৫০. ক্বাফ (ক্বাফ),
৫১. আয-যারিয়াত (বিক্ষেপকারী বাতাস),
৫২. আত্ব তূর (পাহাড়),
৫৩. আন-নাজম (তারা),
৫৪. আল ক্বামার (চন্দ্র)
৫৫. আর রাহমান (পরম করুণাময়)
৫৬. আল ওয়াক্বিয়াহ্ (নিশ্চিত ঘটনা)
৫৭. আল হাদীদ (লোহা)
৫৮. আল মুজাদালাহ্ (অনুযোগকারিণী),
৫৯. আল হাশ্র (সমাবেশ),
৬০. আল মুম্তাহিনাহ্ (নারী, যাকে পরীক্ষা করা হবে),
৬১. আস সাফ (সারবন্দী সৈন্যদল),
৬২. আল জুমুআহ (সম্মেলন/শুক্রবার),
৬৩. আল মুনাফিকূন (কপট বিশ্বাসীগণ),
৬৪. আত তাগাবুন (মোহ অপসারণ),
৬৫. আত ত্বালাক (তালাক),
৬৬. আত তাহ্রীম (নিষিদ্ধকরণ),
৬৭. আল মুল্ক (সার্বভৌম কতৃত্ব),
৬৮. আল ক্বলম (কলম),
৬৯. আল হাক্কাহ (নিশ্চিত সত্য),
৭০. আল মাআরিজ (উন্নয়নের সোপান),
৭১. নূহ (নবী নূহ)
৭২. আল জ্বিন (জ্বিন সম্প্রদায়)
৭৩. আল মুয্যাম্মিল (বস্ত্রাচ্ছাদনকারী)
৭৪. আল মুদ্দাস্সির (পোশাক পরিহিত),
৭৫. আল ক্বিয়ামাহ্ (পুনরু্ত্তান),
৭৬. আদ দাহ্র (মানুষ),
৭৭. আল মুরসালাত (প্রেরিত পুরুষগণ),
৭৮. আন্ নাবা (মহাসংবাদ),
৭৯. আন নাযিয়াত (প্রচেষ্টাকারী),
৮০. আবাসা (তিনি ভ্রুকুটি করলেন),
৮১. আত তাক্ভীর (অন্ধকারাচ্ছন্ন),
৮২. আল ইন্ফিতার (বিদীর্ণ করা),
৮৩. আত মুত্বাফ্ফিফীন (প্রতারণা করা),
৮৪. আল ইন্শিকাক (খন্ড-বিখন্ড করণ),
৮৫. আল বুরুজ (নক্ষত্রপুন্জ),
৮৬. আত তারিক্ব (রাতের আগন্তুক),
৮৭. আল আ’লা (সর্বোন্নত),
৮৮. আল গাশিয়াহ্ (বিহ্বলকর ঘটনা),
৮৯. আল ফাজ্র (ভোরবেলা),
৯০. আল বালাদ (নগর),
৯১. আশ শামস (সূর্য),
৯২. আল লাইল (রাত্রি),
৯৩. আদ দুহা (পূর্বান্হের সুর্যকিরণ),
৯৪. আল ইনশিরাহ (বক্ষ প্রশস্তকরণ),
৯৫. আত ত্বীন (ডুমুর),
৯৬. আল আলাক (রক্তপিন্ড),
৯৭. আল ক্বাদর (মহিমান্বিত),
৯৮. আল বাইয়্যিনাহ (সুস্পষ্ট প্রমাণ),
৯৯. আল যিল্যাল (ভূমিকম্প),
১০০. আল আদিয়াত (অভিযানকারী),
১০১. আল ক্বারিয়াহ (মহাসংকট),
১০২. আত তাকাসুর (প্রাচুর্যের প্রতিযোগিতা),
১০৩. আল আছর (সময়),
১০৪. আল হুমাযাহ (পরনিন্দাকারী),
১০৫. আল ফীল (হাতি),
১০৬. কুরাইশ (কুরাইশ গোত্র),
১০৭. আল মাউন (সাহায্য-সহায়তা),
১০৮. আল কাওসার (প্রাচুর্য),
১০৯. আল কাফিরুন (অবিশ্বাসী গোষ্ঠী),
১১০. আন নাসর (স্বর্গীয় সাহায্য),
১১১. আল লাহাব (জ্বলন্ত অংগার),
১১২. আল ইখলাস (একত্ব)
১১৩. আল ফালাক (নিশিভোর)
১১৪. আন নাস (মানবজাতি)
সংগৃহীত
যে ২টি কারণে ইসলামে মদকে হারাম করা হয়েছে।
যারা মদপানে অভ্যস্ত তারা ৪০ বছর বয়সে ৬০ বছরের বৃদ্ধের মতো অকর্মণ্য হয়ে
পড়ে এবং তাদের শরীরের গঠন এত হালকা হয়ে পড়ে যে, ৬০ বছরেও তেমনটি হয় না।
শারীরিক শক্তি ও সামর্থ্যের দিক দিয়ে অল্প বয়সে বৃদ্ধের মতো বেকার হয়ে পড়ে।
তা ছাড়া মদ লিভার ও কিডনি সম্পূর্ণরূপে বিনষ্ট করে ফেলে। যক্ষ্মা
মদ্যপানেরই একটা বিশেষ উপসর্গ।
ইউরোপের শহরাঞ্চলে যক্ষ্মার আধিক্যের কারণ অধিক মাত্রায় মদ্যপান। মানুষের
জ্ঞান বুদ্ধির ওপর এর প্রতিক্রিয়া মারাত্মক। মানুষ যতক্ষণ নেশাগ্রস্ত থাকে
ততক্ষণ তার জ্ঞান-বুদ্ধি কোনো কাজই করতে পারে না।
অভিজ্ঞ চিকিৎসকের মতে, মদ কখনো শরীরের অংশ হতে পারে না। এতে শরীরে রক্ত
সৃষ্টি হয় না বরং রক্তের মধ্যে একটা সাময়িক উত্তেজনা সৃষ্টি হয় মাত্র। ফলে
সাময়িকভাবে শক্তির অনুভূত হয়। কিন্তু হঠাৎ রক্তের উত্তেজনা অনেক সময়
পাগলামি ও মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
আবার যেসব শিরা ও ধমনির মাধ্যমে সারা দেহে রক্ত প্রবাহিত থাকে মদপানের দরুন
সেগুলো শক্ত ও কঠিন হয়ে পড়ে। ফলে দ্রুতগতিতে বার্ধক্য এগিয়ে আসতে থাকে।
মদের দ্বারা মানুষের গলদেশ এবং শ্বাসনালির যথেষ্ট ক্ষতিসাধিত হয়। ফলে স্বর
মোটা ও স্থায়ী কফের কারণে যক্ষ্মার সৃষ্টি হয়। মদের প্রতিক্রিয়া
উত্তরাধিকার সূত্রে সন্তানের ওপর পড়ে। মদ্যপায়ীদের সন্তান দুর্বল হয় এবং
অনেকে বংশহীনও হয়ে পড়ে।
মদপানের সবচেয়ে ক্ষতিকর দিক হলো মদপান করে যখন মানুষ অজ্ঞান হয়ে পড়ে, তখন
সে নিজের গোপন কথা প্রকাশ করে দেয়। বিশেষভাবে সে যদি কোনো গুরুত্বপূর্ণ
দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তি হয়ে থাকে তখন তার দ্বারা অসচেতনভাবে কোনো গোপন
তথ্য প্রকাশিত হওয়ার ফলে সারা দেশেই পরিবর্তন ও বিপদের সৃষ্টি হয়ে যেতে
পারে। দেশের প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রের কৌশলগত গোপন তথ্য শত্রুর হাতে চলে যেতে
পারে। বিচক্ষণ গুপ্তচররা এ ধরনের সুযোগ গ্রহণ করে থাকে।
ইসলাম পবিত্র পরিচ্ছন্ন ধর্ম। এতে অপবিত্রতা ও অশ্লীলতার কোনো স্থান নেই।
ইসলামের প্রাথমিক অবস্থায় মদপান নিষিদ্ধ ছিল না। নবী (সা.) মদপানের ক্ষতিকর
দিক বিবেচনা করেই পরম করুণাময় ও মহাশক্তিশালী প্রজ্ঞাময় আল্লাহর কাছে দোয়া
করলেন, হে আল্লাহ! মদ সম্পর্কে আমাদের সঠিক নির্দেশনা প্রদান কর।
তখন আল্লাহতায়ালা সূরা বাকারার ২১৯নং আয়াতের মাধ্যমে জানান যে, তারা তোমাকে
মদ, জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে, বলে দাও এতদুভয়ের মধ্যে রয়েছে মহাপাপ। আর
মানুষের জন্য উপকারিতাও রয়েছে, এগুলোর পাপ উপকারিতা অপেক্ষা অনেক বড় আর
তোমার কাছে জিজ্ঞাসা করে, তারা ব্যয় করবে? বলে দাও, নিজের প্রয়োজনীয় ব্যয়ের
পর যা বাঁচে তাই খরচ করবে।
ইসলামে মূলত দুটি প্রধান কারণে মদকে হারাম করা হয়েছে। এ বিষয়ে মহান আল্লাহ
তায়ালা পবিত্র কোরআনে এরশাদ করেন, হে মুমিনগণ নিশ্চয়ই মদ, জুয়া, প্রতিমা
এবং ভাগ্য নির্ধারক শরাবসমূহ শয়তানের অপবিত্র কাজ, যা বৈধ নয়। অতএব এগুলো
থেকে বেঁচে থাক যাতে তোমরা কল্যাণপ্রাপ্ত হও। শয়তান তো চায় মদ ও জুয়ার
মাধ্যমে তোমাদের পরস্পরের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সঞ্চারিত করে দিতে এবং
আল্লাহর স্মরণ ও নামাজ থেকে তোমাদের বিরত রাখতে। অতএব তোমরা এখনো কি
নিবৃত্ত হবে? (সূরা মায়েদার ৯০-৯১ আয়াত)
রাসুল (সা.) অন্যত্র বলেন, শরাব ও ইমান একত্রিত হতে পারে না। রাসুল (সা.)
অন্যত্র বলেছেন, শরাব, ব্যভিচার, অশ্লীলতার জননী।
জনৈক জার্মান চিকিৎসক বলেছেন, ‘যদি অবৈধ শরাবখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়, তবে
আমি নিশ্চয়তা দিতে পারি যে, অর্ধেক হাসপাতাল ও অর্ধেক জেলখানা আপনা আপনি
বন্ধ হয়ে যাবে।’ (ব্রিটিশ আইনজ্ঞ বান্টাম লিখেছেন, ইসলামী শরিয়তের বহুবিধ
বৈশিষ্ট্যের মধ্যে একটি বৈশিষ্ট্য যে, এতে মদ্যপান নিষিদ্ধ। আমরা দেখেছি,
আফ্রিকার লোকেরা যখন মদের ব্যবহার শুরু করে তখন থেকেই তাদের বংশে উন্মাদনা
সংক্রমিত হতে শুরু করে। আর ইউরোপের লোকেরা এ পদার্থটিতে যখন থেকে মুখ দিতে
শুরু করেছে তখন থেকেই তাদের মধ্যে জ্ঞান-বুদ্ধিরও বিবর্তন শুরু হয়েছে।
কাজেই আফ্রিকার লোকের জন্য এটির নিষেধাজ্ঞা আর ইউরোপের লোকদের জন্য কঠোর
শাস্তির বিধান দরকার)।
বিশেষ ফজিলতপূর্ণ আয়াত ও দোয়া সমূহ।
দোয়া: لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِينَ
উচ্চারণ: লা ইলাহা ইল্লা আন্তা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ্ জালিমীন।
অর্থ: আপনি ব্যতীত আর কোনো উপাস্য নেই। আমি আপনার পবিত্রতা ঘোষণা করছি। অবশ্যই আমি পাপী। -সূরা আল আম্বিয়া: ৮৭
ফজিলত
ক. এ আয়াতে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেছেন, আমি নবী ইউনুসের প্রার্থনা মঞ্জুর করেছি। তাকে দু:খ থেকে মুক্তি দিয়েছি। অনুরূপভাবে যে মুমিনরা এ দোয়া পড়বে আমি তাদেরও বিভিন্ন বালা-মুসিবত থেকে মুক্তি দিব। -সূরা আল আম্বিয়া: ৮৮
খ. হজরত নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি হজরত ইউনুস (আ.)-এর ভাষায় দোয়া করবে, সে যে সমস্যায়ই থাকুক আল্লাহতায়ালা তার ডাকে সাড়া দিবেন। -তিরমিজি: ৩৫০৫
গ. হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) আরও ইরশাদ করেছেন, আমার ভাই ইউনুসের দোয়াটি খুব সুন্দর। এর প্রথম অংশে আছে কালিমায়ে তায়্যিবা। মাঝের অংশে আছে তাসবিহ। আর শেষের অংশে আছে অপরাধের স্বীকারোক্তি। যে কোনো চিন্তিত, দু:খিত, বিপদগ্রস্থ ব্যক্তি প্রতি দিন এ দোয়া তিন বার পাঠ করবে আল্লাহতায়ালা তার ডাকে সাড়া দিবেন। -কানজুল উম্মাল: ৩৪২৮
আমল: কঠিন বালা-মুসিবত দূর করার জন্য বর্ণিত দোয়া বা আয়াতটি এক লক্ষ চব্বিশ হাজার পাঠ করে আল্লাহর কাছে দোয়া করলে, ওই দোয়া হয়।
শিশুর জিদ দূর করার আমল
দোয়া:
أَفَغَيْرَ دِينِ اللَّهِ يَبْغُونَ وَلَهُ أَسْلَمَ مَنْ فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ طَوْعًا وَكَرْهًا وَإِلَيْهِ يُرْجَعُونَ
উচ্চারণ: আফাগাইরা দীনিল্লাহি ইয়াবগুনা ওয়ালাহু আসলামা মান ফিস্ সামাওয়াতি ওয়াল আরদি তাউআউ ওয়া কারহান; ওয়া ইলাইহি ইয়ুরজাঊন।
অর্থ: তারা কি আল্লাহর দেয়া জীবন ব্যবস্থার পরিবর্তে অন্য জীবন ব্যবস্থা তালাশ করছে? নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলে যা কিছু আছে স্বেচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায় হোক তার অনুগত হবে। সবাই তার কাছে ফিরে যাবে। -সূরা আল ইমরান: ৮৩
ফজিলত: যে ব্যক্তির সন্তান বা প্রাণী তাকে কষ্ট দেয়, সে যেন তার কানে সূরা আল ইমরানের ৮৩ নং আয়াত পড়ে। -আল মুজামুল আউসাত লিত্ তাবারানি: ৬৪
আমল: সন্তানের অতিরিক্ত জিদ থাকলে, কথা না শোনলে, কথা না মানলে প্রতিদিন ৭ বার সন্তানের কপালের উপরিভাগের চুলে হাত রেখে এ আয়াতখানা পাঠ করে তার চেহারা ও কানে ফুঁ দিলে- জিদ কমে আসে। এ আমল নূন্যতম ২১ দিন লাগাতার করতে হয়।
শ্রেষ্ঠ দোয়া
দোয়া: رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ
উচ্চারণ: রাব্বানা আতিনা ফিদ্ দুনইয়া হাসানাহ্, ওয়াফিল আখিরাতি হাসানাহ্। ওয়াকিনা আজাবান্নার।
অর্থ: হে আমার প্রভু! আমাকে দুনিয়াতে সুখ দান কর, আখেরাতেও সুখ দান কর এবং আমাকে জাহান্নাম থেকে বাঁচাও। -সূরা আল বাকারা: ২০১ৎ
ফজিলত: এ দোয়াকে সর্বশ্রেষ্ঠ দোয়া বলা হয়ে থাকে। নবী করিম (সা.) এ দোয়াটি সবচেয়ে বেশি পাঠ করতেন।
বিশিষ্ট তাবেয়ি হজরত কাতাদাহ (রহ.) সাহাবি হজরত আনাসকে (রা.) জিজ্ঞাসা করলেন, নবী করিম(সা.) কোন দোয়া বেশি করতেন? উত্তরে সাহাবি হজরত আনাস (রা.) উপরোক্ত দোয়ার কথা জানালেন। তাই হজরত আনাস (রা.) নিজে যখনই দোয়া করতেন- তখনই দোয়াতে এই আয়াতকে প্রার্থনারূপে পাঠ করতেন। এমনকি কেউ তার কাছে দোয়া চাইলে তিনি তাকে এ দোয়া দিতেন। -সহিহ মুসলিম: ৭০১৬
হজরত আনাস (রা.) আরও বলেন, আল্লাহতায়ালা এ দোয়ায় দুনিয়া ও আখেরাতের সকল কল্যাণ ও জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণের প্রার্থনা একত্রিত করে দিয়েছেন।
দ্বীনদার স্ত্রী লাভের আমল
দোয়া: رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ أَزْوَاجِنَا وَذُرِّيَّاتِنَا قُرَّةَ أَعْيُنٍ وَاجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِينَ إِمَامًا
উচ্চারণ: রাব্বানা হাবলানা মিন আজওয়াজিনা ওয়া জুররি-ইয়্যাতিনা কুররাতা আয়ুনিওঁ-ওয়াজআলনা লিল মুত্তাকিনা ইমামা।
অর্থ: হে আমার প্রভু! স্ত্রী ও সন্তাদের দ্বারা আমার চোখ শীতল কর। আমাকে পরহেজগারদের আদর্শ কর। -সূরা ফোরকান: ৭৪
আমল: যারা বিয়ে করেননি তারা প্রত্যেক নামাজের (তা ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নত, নফল যে কোনো নামাজ হোক) শেষ বৈঠকে দোয়ায়ে মাছূরা পড়ার পর কোরআনে বর্ণিত এই আয়াতখানা পাঠ করে সালাম ফিরাবেন। বিয়ের ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে এ আমল করলে আশা করা যায়, আল্লাহভক্ত দ্বীনদার, পরহেজগার ও আদর্শ স্ত্রী জুটবে।
আর যারা বিয়ে করেছেন তারা স্ত্রী ও সন্তানদের দ্বীনদার করার জন্য, তাদের আদর্শবান করে গড়ে তোলার জন্য- প্রতিবার দোয়ায় এ আয়াত আয়াত পাঠ করলে বিশেষ উপকার লাভ হয়।
রিজিক বৃদ্ধির আমল
দোয়া: اللَّهُ لَطِيفٌ بِعِبَادِهِ يَرْزُقُ مَنْ يَشَاءُ وَهُوَ الْقَوِيُّ الْعَزِيزُ
উচ্চারণ: আল্লাহু লাতীফুম্ বি-ইবাদিহি ইয়ারজুকু মাইয়্যাশায়ু, ওয়া হুয়াল কাভিয়্যুল আজিজ।
অর্থ: আল্লাহতায়ালা নিজের বান্দাদের প্রতি মেহেরবান। তিনি যাকে ইচ্ছা রিজিক দান করেন। তিনি প্রবল, পরাক্রমশালী। -সূরা শুরা: ১৯
আমল: যে ব্যক্তি প্রতিদিন সকালে নিয়ম করে, একনিষ্ঠতার সঙ্গে ৭০ বার এ আয়াত পড়বে, সে সর্বদা রিজিকের সঙ্কট থেকে হেফাজতে থাকবে।
স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির আমল
স্মৃতিশক্তির দুর্বলতার কারণে অনেক শিক্ষার্থীকেই নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থী নিজে অথবা তার পিতা-মাতা প্রতিদিন প্রত্যেক নামাজের পর সূরা আলাম নাশরাহ পড়ে তার বুকে ফুঁ দিবে। সূরা পাঠ করার শুরু ও শেষে একবার করে দরূদ শরিফ পড়বে। যদি শিক্ষার্থী সমঝদার হয়, তবে প্রতিবার পড়তে বসার সময়, প্রত্যেক ক্লাসের শুরুতে, শিক্ষার প্রতিটি আসরের শুরুতে আগে-পরে দরূদ শরিফসহ এ সূরা পড়ে নিজের বুকে ফুঁ দিবে। যে নিয়মিত এ আমল করবে, আল্লাহর রহমতে তার স্মৃতিশক্তি বাড়বে।
নোট: যে কোনো আরবির বাংলা উচ্চারণ লেখায় মূল উচ্চারণ অনেকাংশেই ব্যহত হয়। এক্ষেত্রে আমাদের পরামর্শ হলো, বর্ণিত এসব দোয়া আপনার নিকটস্থ মসজিদের ইমাম-খতিব বা ভালো কোনো আলেমের কাছ থেকে শিখে নিবেন।
কাফনের কাপড়ের রং যে কারণে সাদা হয়।
প্রত্যেক প্রাণীকেই একদিন
মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে স্পষ্ট
করে উল্লেখ করেছেন, ‘কুল্লুন নাফসিন জায়্যিকাতুল মাউন’। অর্থ্যাৎ প্রতিটি
প্রাণীই একদিন মৃত্যুর শরাব পান করবে। মুত্যুর পর মুসলমানেরা ইসলামের
ব্যাখ্যা অনুযায়ি গোসলের পর মৃতদেহকে কাফনের কাপড় পরিধান করানো হয়। এরপর
জানাজা করে দাফন করা হয়। কিন্তু আপনি জানেন কি, অন্য রঙের কোন কাপড়কে
কাফনের কাপড় হিসেবে কেন ব্যবহার করা হয় না?
এ প্রসঙ্গে ইবনে আব্বাস [রা] থেকে বর্ণিত হাদিসে পাওয়া যায়, তিনি বলেন,
রাসুল [সা] বলেছেন, তোমরা সাদা রঙের কাপড় পরিধান করো। তোমাদের জীবিতরা যেনো
সাদা কাপড় পরিধান করে, আর মৃতদের সাদা কাপড় দিয়ে দাফন দেয়। কেননা, সাদা
কাপড় তোমাদের সর্বোত্তম পোশাক। (নাসায়ি, হাদিস-৫৩২৩)
হযরত সামুরা ইবনে জুনদুব [রা] বলেন, রাসুল [সা] বলেছেন, তোমরা সাদা কাপড়
পরিধান করো। কেননা, তা সর্বাধিক পবিত্র ও উত্তম। আর তা দিয়েই তোমরা মৃতদের
কাফন দাও। (মুজামুল কাবীর, হাদিস-৯৬৪)
২৯ নভেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ/ রাসেল/মাহমুদ
Subscribe to:
Comments (Atom)

