যারা মদপানে অভ্যস্ত তারা ৪০ বছর বয়সে ৬০ বছরের বৃদ্ধের মতো অকর্মণ্য হয়ে
পড়ে এবং তাদের শরীরের গঠন এত হালকা হয়ে পড়ে যে, ৬০ বছরেও তেমনটি হয় না।
শারীরিক শক্তি ও সামর্থ্যের দিক দিয়ে অল্প বয়সে বৃদ্ধের মতো বেকার হয়ে পড়ে।
তা ছাড়া মদ লিভার ও কিডনি সম্পূর্ণরূপে বিনষ্ট করে ফেলে। যক্ষ্মা
মদ্যপানেরই একটা বিশেষ উপসর্গ।
ইউরোপের শহরাঞ্চলে যক্ষ্মার আধিক্যের কারণ অধিক মাত্রায় মদ্যপান। মানুষের
জ্ঞান বুদ্ধির ওপর এর প্রতিক্রিয়া মারাত্মক। মানুষ যতক্ষণ নেশাগ্রস্ত থাকে
ততক্ষণ তার জ্ঞান-বুদ্ধি কোনো কাজই করতে পারে না।
অভিজ্ঞ চিকিৎসকের মতে, মদ কখনো শরীরের অংশ হতে পারে না। এতে শরীরে রক্ত
সৃষ্টি হয় না বরং রক্তের মধ্যে একটা সাময়িক উত্তেজনা সৃষ্টি হয় মাত্র। ফলে
সাময়িকভাবে শক্তির অনুভূত হয়। কিন্তু হঠাৎ রক্তের উত্তেজনা অনেক সময়
পাগলামি ও মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
আবার যেসব শিরা ও ধমনির মাধ্যমে সারা দেহে রক্ত প্রবাহিত থাকে মদপানের দরুন
সেগুলো শক্ত ও কঠিন হয়ে পড়ে। ফলে দ্রুতগতিতে বার্ধক্য এগিয়ে আসতে থাকে।
মদের দ্বারা মানুষের গলদেশ এবং শ্বাসনালির যথেষ্ট ক্ষতিসাধিত হয়। ফলে স্বর
মোটা ও স্থায়ী কফের কারণে যক্ষ্মার সৃষ্টি হয়। মদের প্রতিক্রিয়া
উত্তরাধিকার সূত্রে সন্তানের ওপর পড়ে। মদ্যপায়ীদের সন্তান দুর্বল হয় এবং
অনেকে বংশহীনও হয়ে পড়ে।
মদপানের সবচেয়ে ক্ষতিকর দিক হলো মদপান করে যখন মানুষ অজ্ঞান হয়ে পড়ে, তখন
সে নিজের গোপন কথা প্রকাশ করে দেয়। বিশেষভাবে সে যদি কোনো গুরুত্বপূর্ণ
দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তি হয়ে থাকে তখন তার দ্বারা অসচেতনভাবে কোনো গোপন
তথ্য প্রকাশিত হওয়ার ফলে সারা দেশেই পরিবর্তন ও বিপদের সৃষ্টি হয়ে যেতে
পারে। দেশের প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রের কৌশলগত গোপন তথ্য শত্রুর হাতে চলে যেতে
পারে। বিচক্ষণ গুপ্তচররা এ ধরনের সুযোগ গ্রহণ করে থাকে।
ইসলাম পবিত্র পরিচ্ছন্ন ধর্ম। এতে অপবিত্রতা ও অশ্লীলতার কোনো স্থান নেই।
ইসলামের প্রাথমিক অবস্থায় মদপান নিষিদ্ধ ছিল না। নবী (সা.) মদপানের ক্ষতিকর
দিক বিবেচনা করেই পরম করুণাময় ও মহাশক্তিশালী প্রজ্ঞাময় আল্লাহর কাছে দোয়া
করলেন, হে আল্লাহ! মদ সম্পর্কে আমাদের সঠিক নির্দেশনা প্রদান কর।
তখন আল্লাহতায়ালা সূরা বাকারার ২১৯নং আয়াতের মাধ্যমে জানান যে, তারা তোমাকে
মদ, জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে, বলে দাও এতদুভয়ের মধ্যে রয়েছে মহাপাপ। আর
মানুষের জন্য উপকারিতাও রয়েছে, এগুলোর পাপ উপকারিতা অপেক্ষা অনেক বড় আর
তোমার কাছে জিজ্ঞাসা করে, তারা ব্যয় করবে? বলে দাও, নিজের প্রয়োজনীয় ব্যয়ের
পর যা বাঁচে তাই খরচ করবে।
ইসলামে মূলত দুটি প্রধান কারণে মদকে হারাম করা হয়েছে। এ বিষয়ে মহান আল্লাহ
তায়ালা পবিত্র কোরআনে এরশাদ করেন, হে মুমিনগণ নিশ্চয়ই মদ, জুয়া, প্রতিমা
এবং ভাগ্য নির্ধারক শরাবসমূহ শয়তানের অপবিত্র কাজ, যা বৈধ নয়। অতএব এগুলো
থেকে বেঁচে থাক যাতে তোমরা কল্যাণপ্রাপ্ত হও। শয়তান তো চায় মদ ও জুয়ার
মাধ্যমে তোমাদের পরস্পরের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সঞ্চারিত করে দিতে এবং
আল্লাহর স্মরণ ও নামাজ থেকে তোমাদের বিরত রাখতে। অতএব তোমরা এখনো কি
নিবৃত্ত হবে? (সূরা মায়েদার ৯০-৯১ আয়াত)
রাসুল (সা.) অন্যত্র বলেন, শরাব ও ইমান একত্রিত হতে পারে না। রাসুল (সা.)
অন্যত্র বলেছেন, শরাব, ব্যভিচার, অশ্লীলতার জননী।
জনৈক জার্মান চিকিৎসক বলেছেন, ‘যদি অবৈধ শরাবখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়, তবে
আমি নিশ্চয়তা দিতে পারি যে, অর্ধেক হাসপাতাল ও অর্ধেক জেলখানা আপনা আপনি
বন্ধ হয়ে যাবে।’ (ব্রিটিশ আইনজ্ঞ বান্টাম লিখেছেন, ইসলামী শরিয়তের বহুবিধ
বৈশিষ্ট্যের মধ্যে একটি বৈশিষ্ট্য যে, এতে মদ্যপান নিষিদ্ধ। আমরা দেখেছি,
আফ্রিকার লোকেরা যখন মদের ব্যবহার শুরু করে তখন থেকেই তাদের বংশে উন্মাদনা
সংক্রমিত হতে শুরু করে। আর ইউরোপের লোকেরা এ পদার্থটিতে যখন থেকে মুখ দিতে
শুরু করেছে তখন থেকেই তাদের মধ্যে জ্ঞান-বুদ্ধিরও বিবর্তন শুরু হয়েছে।
কাজেই আফ্রিকার লোকের জন্য এটির নিষেধাজ্ঞা আর ইউরোপের লোকদের জন্য কঠোর
শাস্তির বিধান দরকার)।
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)