এসএসসি প্রস্তুতি : বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা



সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর
উদ্দীপকটি পড়ো এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও
ঢাকা জেলার মধ্যযুগের ইতিহাস অনুসন্ধান করতে গিয়ে অধ্যাপক মিজানুর রহমান সে যুগের সাহিত্য, নথিপত্র, বিভিন্ন মানুষের জীবনী, মূর্তি, স্মৃতিস্তম্ভ, মুদ্রা, লিপি, ইমারত প্রভৃতির ওপর স্টাডি করেন এবং বিভিন্ন রকম তথ্য সংগ্রহ করেন। স্থানীয় জনশ্রুতির সঙ্গে এসব তথ্য মিলিয়ে তা যাচাই-বাছাই করে তিনি ঢাকা জেলার অনেক অজানা তথ্য আবিষ্কার করেন।
(ক) ইতিহাসের জনক বলা হয় কাকে?
(খ) ইতিহাসের বিষয়বস্তু কী?
(গ) উদ্দীপকে অধ্যাপক মিজানুর রহমান ইতিহাস অনুসন্ধান করতে গিয়ে যেসব জিনিস স্টাডি করেছেন, সেগুলোকে কী বলা হয়? ব্যাখ্যা করো।
(ঘ) উদ্দীপকে অধ্যাপক মিজানুর রহমান যেভাবে ঢাকা জেলার বহু অজানা তথ্য আবিষ্কার করেছেন, বাস্তব জীবনে এ ধরনের কাজের প্রয়োজনীয়তা কতটুকু? তোমার মতামত বিশ্লেষণ করো।
উত্তর
(ক) ইতিহাসের জনক বলা হয় হেরোডোটাসকে।
(খ) সমাজ ও সভ্যতার ধারাবাহিক পরিবর্তনের প্রমাণ ও লিখিত দলিল হলো ইতিহাস।
ইতিহাসের বিষয়বস্তু সম্পর্কে আধুনিক ঐতিহাসিক ভিকো বলেন, ‘মানবসমাজ ও মানবীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর উৎপত্তি ও বিকাশই হচ্ছে ইতিহাসের বিষয়বস্তু। মানুষের গুরুত্বপূর্ণ অর্জন যা মানবসমাজ ও সভ্যতার উন্নতি ও অগ্রগতিতে অবদান রাখতে সক্ষম হয়েছে, তা সবই ইতিহাসের বিষয়বস্তু। যেমন-শিল্প, সাহিত্য-সংস্কৃতি, দর্শন, স্থাপত্য, রাজনীতি, যুদ্ধ, ধর্ম, আইন প্রভৃতি বিষয় সামগ্রিকভাবে যা কিছু সমাজ-সভ্যতা বিকাশে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে প্রভাবিত করেছে তাই ইতিহাসের বিষয়বস্তু।
(গ) উদ্দীপকে অধ্যাপক মিজানুর রহমান ইতিহাস অনুসন্ধান করতে গিয়ে যেসব জিনিস স্টাডি করেছেন, সেগুলোকে ইতিহাসের উপাদান বলা হয়।
যেসব তথ্য প্রমাণের ওপর ভিত্তি করে ঐতিহাসিক সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব, তাকে ইতিহাসের উপাদান বলা হয়। ইতিহাসের উপাদানকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথাÑলিখিত উপাদান ও অলিখিত উপাদান।
উদ্দীপকে অধ্যাপক মিজানুর রহমান ঢাকা জেলার মধ্যযুগের ইতিহাস অনুসন্ধান করতে গিয়ে সে যুগের সাহিত্য, নথিপত্র, বিভিন্ন মানুষের জীবনী প্রভৃতির ওপর স্টাডি করেন। এগুলোকে ইতিহাসের লিখিত উপাদান বলে। এ ছাড়াও লিখিত উপাদানের মধ্যে আরো রয়েছে বৈদেশিক বিবরণ, দলিলপত্র প্রভৃতি। সাহিত্যকর্মের মধ্যে রয়েছে বেদ, কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র প্রভৃতি। বিদেশি পর্যটকদের বিবরণ সব সময়ই ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান বলে বিবেচিত হয়। যেমন-ফা-হিয়েন, হিউয়েন সাং, ইবনে বতুতার বর্ণনা। এ ছাড়াও রয়েছে নানা রূপকথা, কিংবদন্তি, কল্পকাহিনী, সরকারি নথি, চিঠিপত্র প্রভৃতি। এগুলো বাদে অধ্যাপক মিজানুর রহমান মূর্তি, স্মৃতিস্তম্ভ, মুদ্রা, লিপি, ইমারত নিয়েও গবেষণা করেন। এগুলো ইতিহাসের অলিখিত উপাদান বা প্রতœতাত্তি¡ক নিদর্শন। যেসব বস্তু বা উপাদান থেকে আমরা বিশেষ সময়, স্থান বা ব্যক্তি সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের ঐতিহাসিক তথ্য পাই, সে বস্তু বা উপাদানই অলিখিত উপাদান বা প্রতœতাত্তি¡ক নিদর্শনভুক্ত। যেমন-মুদ্রা, শিলালিপি, স্তম্ভলিপি, তাম্রলিপি, ইমারত প্রভৃতি। ওপরের আলোচনার ভিত্তিতে আমরা বলতে পারি, অধ্যাপক মিজানুর রহমান ইতিহাস অনুসন্ধান করতে গিয়ে যেসব জিনিস অর্থাৎ সাহিত্য, নথিপত্র, বিভিন্ন মানুষে জীবনী, মূর্তি, স্মৃতিস্তম্ভ, মুদ্রা, লিপি, ইমারত প্রভৃতির স্টাডি করেছেন, সেগুলোকে ইতিহাসের উপাদান বলা হয়।
(ঘ) উদ্দীপকে অধ্যাপক মিজানুর রহমান যেভাবে ঢাকা জেলার বহু অজানা তথ্য আবিষ্কার করেছেন, বাস্তব জীবনে এ ধরনের কাজের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।
অধ্যাপক মিজানুর রহমান মূলত যে কাজটি করেছেন তা হলো তিনি অতীতের বিভিন্ন লিখিত ও অলিখিত তথ্য এবং উপাত্ত বিশ্লেষণের মাধ্যমে অতীতের সঠিক ইতিহাস উদ্ঘাটন করেছেন। ইতিহাস এক প্রজন্মের সভ্যতা ও সংস্কৃতি সম্পর্কে আরেক প্রজন্মকে অবহিত করে। মানুষ তার অতীত ঐতিহ্যকে বুকে ধারণ করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা লাভ করে।
উদ্দীপকে অধ্যাপক মিজানুর রহমান ঢাকা জেলার ইতিহাসের বিভিন্ন উপাদান নিয়ে গবেষণা করে এ জেলার অনেক অজানা ইতিহাস আবিষ্কার করেছেন। বাস্তব জীবনে এ ধরনের কাজ খুব প্রয়োজন। কেননা ইতিহাস পাঠ মানুষকে অতীতের পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমান অবস্থা বুঝতে ও ভবিষ্যৎ অনুধাবন করতে সাহায্য করে। ইতিহাস পাঠের ফলে মানুষের পক্ষে নিজের ও নিজ দেশ সম্পর্কে মঙ্গল-অমঙ্গলের পূর্বাভাস পাওয়া সম্ভব। তা ছাড়া অতীতের সত্যনিষ্ঠ বর্ণনা মানুষের জ্ঞানের পরিধি বৃদ্ধি করে। আর এ বিবরণ যদি হয় নিজ দেশ, জাতির সফল সংগ্রাম, গৌরবময় ঐতিহ্যের তাহলে তা মানুষকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধু করে। একই সঙ্গে আত্মপ্রত্যয়ী ও  আত্মবিশ্বাসী হতেও সাহায্য করে। ইতিহাস পাঠ মানুষকে ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সচেতন করে তোলে। বিভিন্ন মানবগোষ্ঠীর উত্থান-পতন এবং সভ্যতার বিকাশ ও পতনের কারণগুলো জানতে পারলে মানুষ ভালো-মন্দের পার্থক্যটা সহজে বুঝতে পারে। ফলে সে তার কর্মের পরিণতি সম্পর্কে সচেতন থাকে এবং সে অনুযায়ী তিনি সামনের দিকে এগিয়ে যান।
ওপরের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা বলতে পারি যে অধ্যাপক মিজানুর রহমান যেভাবে ঢাকা জেলার বহু অজানা তথ্য আবিষ্কার করেছেন, বাস্তব জীবনে এ ধরনের কাজ খুবই প্রয়োজন।

শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট